স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপি পাঁচ দিনব্যাপী ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনাসভা শেষে শুক্রবার রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির বাস্তবতায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার ল্েয বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প থেকে সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চাওয়া হয়েছে। সব ঠিক থাকলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি পর্বে চাওয়া হয়েছে। প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তা ছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
নি¤œ আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ আসার পর অর্থনীতির সমতা বাড়াতে সরকারকে মনোযোগী হতে পরামর্শ দিয়ে অর্থনীতিবিদরা পণ্য বহুমুখীকরণ ও সমতায় জোর দিতে বলেছেন। তাঁদের মতে, সাময়িকভাবে বাজার নিয়ে সমস্যা হলেও তা কাটিয়ে ওঠার সমতা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের আছে। এর সঙ্গে যেসব নীতি-সহায়তা প্রয়োজন, সেগুলো নিশ্চয়ই সরকার দেবে বলেও মনে করেন তাঁরা। এখন দ্বিপীয় মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। আমদানি শুল্ক কমানোসহ উচ্চমাত্রার সংরণমূলক নীতি পাল্টাতে হবে সরকারকে। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা সমতা বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের এখনই উদ্যোগী হওয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের এই অনন্য অর্জনের খবর জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। এ অর্জনকে সুসংহত ও টেকসই করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। সত্যিকার অর্থেই এ অর্জনকে সুসংহত ও টেকসই করার পথ আমাদের তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পেল, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে জাতি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আগামী দিনের অর্থনীতির প্রথম সারিতে বাংলাদেশ থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই অনন্য অর্জন সামনে রেখে এগিয়ে যাক আত্মনির্ভর বাংলাদেশ।