পবিত্র রমজান মাস এগিয়ে আসছে। এক শ্রেণির অতিলোভী ব্যবসায়ীর কারসাজিও শুরু হয়ে গেছে। রমজানে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। সেই কারসাজি রোধ এবং বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার অন্যান্য বছরের মতো এবারও কিছু কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) আরো ২৫ হাজার টন ভোজ্য তেল আমদানি করছে। সুলভ মূল্যে ডাল, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ আরো বেশ কিছু পণ্য বিপণন করবে এই রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থাটি। বাজারেও এসব পণ্যের কোনো অভাব নেই। তার পরও প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম একটু একটু করে বাড়ছে। কেন? বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এখানে ভোক্তাদেরও ভূমিকা রয়েছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা থেকে রমজান মাস আসার আগেই অনেকে এসব পণ্যের ছোটখাটো মজুদ গড়ে তোলেন। এতে হঠাৎ করে বাজারে চাহিদা বেড়ে যায় এবং ব্যবসায়ীরা এই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বাজারে চালের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালের দামই কেজিপ্রতি দুই টাকার মতো বেড়ে গেছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুল্ক সুবিধাসহ চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছিল সরকার। কমবেশি প্রায় সব দোকানে আমদানি করা চাল দেখতেও পাওয়া যায়। তার পরও চালের দাম না কমে উল্টো আরো বাড়ছে। টিসিবির হিসাবে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম বেশি রয়েছে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভোক্তারা, বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষজন।
রোজার মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন অপতৎপরতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার অনৈতিক ইচ্ছা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাব। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রায় প্রতিবছরই বলা হয়, সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। অথচ রমজান শুরু হতে এক মাসেরও বেশি সময় বাকি থাকতেই বাজার ক্রমে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের টিসিবি খোলাবাজারে কিছু পণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নেয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। ফলে টিসিবির এই উদ্যোগ বাজারে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারে না। অভিজ্ঞ মহল মনে করে, টিসিবির এই উদ্যোগ কার্যকর করতে হলে রমজানের এক-দুই মাস আগে থেকেই তা শুরু করা প্রয়োজন এবং তা করতে হবে আরো ব্যাপক পরিসরে। আর তা না করতে পারলে এটি একটি লোক-দেখানো উদ্যোগই থেকে যাবে। সাধারণ মানুষ বা ভোক্তাদের স্বার্থ রার দায়িত্ব সরকারের। অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে। সিন্ডিকেট বা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে কার্যকর নজরদারি ও আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। পবিত্র মাসে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদেরও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।