রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) নাম তাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এই গোষ্ঠীটি হামলা চালানো বন্ধ করেছে এবং দেশজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে রাজি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম।
১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সৃষ্ট বিক্ষোভ সামাল দিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে প্রায় প্রতিদিনই সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এর মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিল দেশটির সামরিক জান্তা।
আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। গত দুই বছরে বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীটি মিয়ানমারের বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সমীহ জাগানো নাম হয়ে উঠেছে। দেশটির সেনাবাহিনী প্রায় ৭০ বছর ধরে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর বিদ্রোহী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
গত বছর সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) দলীয় সরকার আরাকান আর্মিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
মিয়ানমারের সরকার পরিচালিত মিরর ডেইলি লিখেছে, আরকান আর্মিকে ২০২১ সালের ১১ মার্চ থেকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে এএ-র হামলা চালানো বন্ধ করার ও সামরিক জান্তার ‘দেশব্যাপী চিরন্তন শান্তি’ প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিভঙ্গীর কথা বলা হয়েছে।
আরাকান আর্মি নভেম্বরে সাময়িক অস্ত্রবিরতি করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ পড়া নিয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও গোষ্ঠীটি সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মিয়ানমারের প্রায় ২৪টিরও বেশি নৃগোষ্ঠীটির সশস্ত্র বাহিনীগুলো সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা করেছে। তাদের কেউ কেউ অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থনও দেখিয়েছি। তারপরও বিদ্রোহী এসব বাহিনীগুলোর কোনোটিই অস্ত্রবিরতি চুক্তি বাতিল করে ফের সামরিক তৎপরতা শুরুর মতো উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আরাকান আর্মিও জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। রাখাইন রাজ্যেও অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ তেমন একটা হয়নি।
২০১৭ সালে এই রাজ্যটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় সাত লাখ সদস্য সেনাবাহিনীর দমনাভিযানের মুখে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরই রাজ্যটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়। ১৮শ শতাব্দি পর্যন্ত রাখাইন একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল।
আরাকান আর্মির অধিকাংশ সদস্যই রাখাইন নৃগোষ্ঠী ও স্থানীয় সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।