জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাত্র দুইদিনেই হেরে গিয়েছিল আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। তবে ঘুরে দাঁড়াতে একদমই সময় নেয়নি তারা। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে ৬ উইকেটের জয়ে ১-১ সমতায় শিরোপা ভাগাভাগি করেছে আসগর আফগানের দল।
রোববার ম্যাচের শেষদিন জিম্বাবুয়ের দেয়া ১০৮ রানের লক্ষ্য ২৬.১ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে টপকে গেছে আফগানিস্তান। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ৩৬৫ রানে অলআউট হলে, আফগানদের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১০৮ রানের।
টেস্ট ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত ছয় ম্যাচে তিনটি জয় পেল আফগানিস্তান। সাদা পোশাকের অভিজাত ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে দ্রুততম সময়ে তিন জয় তুলে নিল তারা। টেস্ট ক্রিকেট শুরুর পর মাত্র ষষ্ঠ ম্যাচেই নিজেদের তৃতীয় জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম তিন টেস্ট জিততে সবচেয়ে বেশি ৬১ ম্যাচ খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর আগে ৫৭তম ম্যাচে গিয়ে তৃতীয় জয় পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম ১৫ ম্যাচে তিন জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। যা এখন নিজেদের দখলে নিয়ে নিল আফগানিস্তান।
সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে আফগানদের প্রথম ইনিংসে করা ৫৪৫ রানের জবাবে ফলোঅনে পড়ে সফরকারী জিম্বাবুয়ে, পিছিয়ে ছিল ২৫৮ রানে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। আফগানিস্তানের চেয়ে ১১৬ রানে পিছিয়ে থাকতেই হারিয়ে ফেলে ৭টি উইকেট।
মাত্র ১৪২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে যখন চোখরাঙানি দিচ্ছিল ফলোঅন, তখনই প্রতিরোধ গড়েছে উইলিয়ামস-তিরিপানো জুটি। শনিবার ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষে ২৫৬ বলে ১২৪ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন ছিলেন এ দুজন।
আজ (রোববার) ম্যাচের শেষদিনও শুরু করেন আগেরদিনের মতোই। দুজন মিলে কাটিয়ে দেন প্রায় দুই ঘণ্টা। প্রথম সেশন শেষ হওয়ার ঠিক আগ দিয়েই ঘটে গড়বড়! দিনের ২৯তম ওভারে গিয়ে জুটিটি ভাঙেন আফগানিস্তানের তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খান। ততক্ষণে নব্বই পেরিয়ে সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছিলেন ডোনাল্ড তিরিপানো।
কিন্তু কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কের দেখা পাননি এ পেসার। রশিদ খানের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে যান তিনি। ফলে সমাপ্তি ঘটে ২৫৮ বলে ৯৫ রানের লড়াকু ইনিংসের। মাত্র ৫ রানের জন্য ১৬ চারের মারে খেলা ইনিংসটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি তিনি।
রেকর্ড ১৮৭ রানের জুটি গড়ে তিরিপানো ফিরে যাওয়ার পর শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে আর ৩৬ রান যোগ করতে পেরেছেন অধিনায়ক উইলিয়ামস। তিনি শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৫১ রান করে।
জিম্বাবুয়ের ৩৬৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে অবশ্য বড় দায় নিতে হবে আম্পায়ারকে। ব্লেসিং মুজুরাবানিকে সঙ্গে নিয়ে নবম উইকেটে ৩৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন উইলিয়ামস। তখন আমির হামজার বলে মুজুরাবানিকে ভুল কট বিহাইন্ড আউট দেন আম্পায়ার। ফলে ইতি ঘটে মুজুরাবানির ৪৩ বলে ১৭ রানের ইনিংসের।
পরে শেষ ব্যাটসম্যান ভিক্টর নিয়ুচি এক বলের বেশি খেলতে পারেননি। মুখোমুখি প্রথম বলেই তিনি পড়েন লেগ বিফোরের ফাঁদে। নিয়ুচিকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার তুলে নেন রশিদ। অপরপ্রান্তে হতাশ মুখে নিজ দলকে অলআউট হতে দেখেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
পরে ১০৮ রান তাড়া করতে নেমে আফগানদের কাজ সহজ করেন তিন নম্বরে নামা রহমত শাহ। তার ব্যাট থেকে আসে ৭৬ বলে ৫৮ রানের ইনিংস। এছাড়া ৬৫ বলে ২৯ রান করেন ইব্রাহিম জাদরান। মূলত এ দুজনের ব্যাটেই ১০৮ রানের লক্ষ্য সহজেই ছুঁয়ে ফেলেছে আফগানিস্তান।
ম্যাচে আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংসে দেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন হাশমতউল্লাহ শহিদী। অন্যদিকে দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি করায় সিরিজসেরার পুরস্কার গেছে শন উইলিয়ামসের হাতে।