ক্ষতিগ্রস্ত ৩২ হাজার কৃষক পরিবার
Published : Monday, 15 March, 2021 at 12:00 AM
মো. মিজানুর রহমান ।।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় হিমাগারের অভাবে ৩২ হাজার কৃষক পরিবার তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, উন্নত মানের বীজের ব্যবহার, আধুনিক পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগের ফলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় কৃষিপণ্যের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও হিমাগারের অভাবে কৃষকদের উৎপাদিত পচনশীল কৃষিপণ্য কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকেরা। এতে করে কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
সূত্র জানায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড থেকে ২৭নং ওয়ার্ড ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর, চৌয়ারা, বারপাড়া, গলিয়ারা উত্তর, গলিয়ারা দক্ষিণ, জোড়কানন পূর্ব, জোড়কানন পশ্চিম ইউনিয়নের ৩২ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছেন (২০০৮ সালের জরিপ অনুযায়ি) । কৃষকরা আলু, মরিচ, বাধাকপি, ফুলকপি, মুলা, গাজর, টমোটো, বেগুণ, দেঁড়সসহ নানা মৌসুমে সবজির আবাদ করে থাকেন। যখন সকল কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য একসাথে বাজারে আসে তখনই বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্য কমে যায়। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেলেও উপজেলার কোথাও হিমাগার না থাকায় তাদের কৃষিপণ্য কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে কৃষক অনেক সময় উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। যার ফলে অধিক পরিশ্রম করে ও পুঁজি বিনিয়োগ করার পরও তারা তাদের উৎপাদনকৃত সবজির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হিমাগার না থাকায় তাদের উৎপাদিত মৌসুমে কৃষিপণ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে। উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের রতনপুর এলাকায় অবস্থিত উপজেলার একমাত্র (মজুমদার হিমাগারটি) গত প্রায় ৩ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে বলে দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে জানিয়েছেন, স্থানীয় শিবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মহিউদ্দিন মজুমদার দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে জানান, হিমাগারের অভাবে সবজির মূল্য কম হলেও কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কুমিল্লা জেলা কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের জেলা বাজার কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে জানান, কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসার এলাকায় বিশেসায়িত একটি সবজির হিমাগার স্থাপনের জন্য তিনটি স্থান প্রস্তাব করার পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ ইউসুফ প্রস্তাবিত স্থানগুলো পরিদর্শন করেছেন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে জানান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা একটি কৃষি প্রধান উপজেলা। কৃষি খাতে উক্ত উপজেলার অবস্থান জিডিপিতে প্রায় জাপানের কাছাকাছি। তাঁর এলাকার বেশীরভাগ জমি ৩ ফসলী ও কোনো কোনো জমি ৪ ফসলিও। মৌসুমে আমাদের উৎপাদিত ধান, চাল, সবজি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরী, গরু মোটা-তাজাকরণ, দুগ্ধ খামারগুলোতে অতিরিক্ত উৎপাদনকৃত এসব কৃষিপণ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি কুমিল্লা সদর উপজেলায় জরুরী ভিত্তিতে একটি বিশেসায়িত হিমাগার স্থাপনের দাবী জানান।
উপজেলায় সরকারী কিংবা বেসরকারী উদ্যোগে হিমাগার স্থাপন করা হলে কৃষক পরিবারের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের নষ্টের পরিমাণ কমে যেতো এবং তাঁরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতো। ফলে শিক্ষিত যুবকেরা কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতো। যার ফলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন পাইকারী বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করতে পারতেন বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।