৪১তম বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ
Published : Tuesday, 16 March, 2021 at 12:00 AM
দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আগামী ৩০ মার্চ খুলবে কীনা সে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথাও ভাবা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যাচ্ছে আগামী ১৯ মার্চ। এই সময়ে বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরাও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু এখনই শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে পরীক্ষা নিতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া উচিৎ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ নিয়ে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া উচিৎ। এই পরীক্ষায় যে সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া কঠিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার টিকা আসার পর অনেকে সচেতন থাকার বিষয়ে শৈথিল্য দেখিয়েছেন, সেসব কারণে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। আগের মতো মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ভয়াবহভাবে কমে গেছে। তাই পরীক্ষা পিছিয়ে নেওয়া ভালো হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা.আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘পিছিয়ে দিলেও টিকা দিতে হবে। এদের এখনও টিকা দিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো। একটা মাত্র কারণে পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে তা হচ্ছে টিকা দেওয়া। কিন্তু সেটাও দিতে হলেও প্রায় এক মাস সময় লাগবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে যদি নেওয়া সম্ভব হয় তাহলে নিতে হবে। কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করে পরীক্ষা নিতে হবে।’
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। এর আগেও আমরা দেখেছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে করার কথা বলা হলেও, বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।’
ডা. লেলিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘এখন সংক্রমণ বাড়ছে, যেসব কাজে জনসমাগম হয়, মানুষের ভিড় হয় সেসব কাজ আপাতত বন্ধ রাখা উচিত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি, ওয়াজ-মাহফিল, পরীক্ষা, মেলা ইত্যাদি বন্ধ রাখা উচিৎ। ভয়াবহ বিপদ আমাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে সে কারণে আমাদের সাবধান হওয়া উচিৎ।’
আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। গত ১০ মার্চ সরকারি কর্ম-কমিশন (পিএসসি) আসন বিন্যাস প্রকাশ করার পর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি জানায়। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
অন্যদিকে পিএসসি সোমবার (১৫ মার্চ) বিকাল পর্যন্ত যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৯ মার্চ ৪১তম সাধারণ বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা চার লাখ ৭৫ হাজার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য নতুন কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন ক্যাডারে দুই হাজার ১৬৬ শূন্যপদে প্রার্থী নিয়োগ দিতে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৯ সালে নভেম্বরে। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে আবেদন জমা নেওয়া হয় ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।
প্রার্থীদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদে ৩২৩ জনসহ সাধারণ ক্যাডারে ৬৪২ জন, প্রফেশনাল ও টেকনিক্যাল ক্যাডারে ৬১৯ জন, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৮৯২ জন, সহকারী শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ১৩ জনসহ মোট দুই হাজার ১৬৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।