বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এক বছর পেরিয়েছে। এই এক বছর পর দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা খাত। শিক্ষার্থীরা গত একটি বছর নিয়মিত কাসে উপস্থিত হতে পারেনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কাসে উন্নীত করা হয়েছে। গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীা বাতিল করা হয়। স্কুল খোলা যায়নি বিধায় বার্ষিক পরীাসহ কোনো পরীক্ষাই নেওয়া হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, স্কুল-কলেজের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। মে মাস থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে কাস পরীক্ষা এবং জুলাই মাস থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন কাস শুরু হয়। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর কাছে প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকা, দুর্বল ও ধীরগতির ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেটের উচ্চ দামের কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পইে অনলাইনে কাস করা সম্ভব হয়নি, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার ও মফস্বলের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে অনেক পরীক্ষা আটকে থাকায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় ধরনের সেশনজট তৈরি হয়েছে। গত বছর পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির প্রভাবে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৮২ শতাংশ আর গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৭৯ শতাংশ। এই অবস্থায় জীবিকার প্রয়োজনে অভিভাবকরা সন্তানদের উপার্জনমূলক বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন। এই শিশুরা আর কখনো শিক্ষাজীবনে ফিরবে না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি বা অন্য কোনো উপায়ে উপার্জন করে নিজেদের শিক্ষার খরচ চালাত, তাদেরও শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বৈশ্বিক মহামারি দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। গৃহবন্দি থেকে থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চাপ পড়ছে। একঘেয়ে হয়ে পড়েছে প্রায় সব কিছু। এ থেকে পরিত্রাণের পথ বের করতে হবে। শিক্ষাবিদ, শিক সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান খোঁজা জরুরি বলে আমরা মনে করি।