একবার দু‘বার নয়। পরিসংখ্যান বলছে, গত চার পাঁচ বছরে (২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে) নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের বিপক্ষে এ নিয়ে চারবার ৮ উইকেটের ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ। ব্যবধানগত তারতম্য খুব বড় কিছু নয়। ৮ উইকেট কেন, অনেক বড় বড় দলও ওয়ানডেতে ১০ উইকেটে হারে।
কিন্তু তারও একটা ধরণ থাকে। পরিসংখ্যান পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে, বাংলাদেশ গত চার-পাঁচ বছরে নিউজিল্যান্ডের কাছে এর আগে যে তিনবার ৮ উইকেটে হেরেছে প্রতিবারই খেলা হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে।
এর মধ্যে ২০১৬ সালে নেলসনে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান করে ৮ উইকেটে হেরেছিল টাইগাররা। দুই ওপেনার তামিম (৫৯) ও ইমরুল (৪৪) প্রথম উইকেটে ১০২ রান তুলে দিলেও নুরুল হাসান সোহান (৪৪) ছাড়া পরের ব্যাটসম্যানরা রান করতে না পারায় ২৩০’র ঘরেই শেষ হয় ইনিংস।
এরপর ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলেছে মাশরাফির দল। এর মধ্যে নেপিয়ার ও ক্রাইস্টচার্চে ৮ উইকেটে এবং ডানেডিনে ৮৮ রানে হার মানে টাইগাররা। বব্যধান ৮ উইকেটের হলেও ওই তিন ম্যাচের প্রথমটিতে ২৩২ রান করেছিল বাংলাদেশ। মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাট থেকে এসেছিল সর্বোচ্চ ৬২। অলরাউন্ডার সাইফউদ্দীন করেছিলেন ৪১। এছাড়া সৌম্য সরকার ৩০ ও মিরাজের সংগ্রহ ছিল ২৬।
ক্রাইস্টচার্চে পরের ম্যাচে ৮ উইকেটে হারলেও মাশরাফির দলের স্কোর গিয়ে ঠেকেছিল ২২৬ পর্যন্ত। টপ স্কোরার ছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন, ৫৭। আর সাব্বির রহমানের সংগ্রহ ছিল ৪৩।
ডানেডিনে ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের ৬ উইকেটে ৩৩০ রানের পাহাড় সমান স্কোরের জবাবে ৮৮ রানে হারের ম্যাচে টাইগারদের স্কোর ছিল ২৪২। সাব্বির রহমান রুম্মন সেঞ্চুরি করেছিলেন (১০২)। আর সাইফউদ্দীন ৪৪ ও মিরাজ ৩৭ রানের আরও দুটি মাঝারী ইনিংস খেলেছিলেন।
শুধু হারের সাতকাহনই নয়। জয়ের গল্পও আছে। ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে তিন জাতি আসরে আরও দুবার নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল মাশরাফির দল। রাউন্ড রবিন লিগের প্রথম ম্যাচে ২৫৭ রান করে ৪ উইকেটে হারলেও ফিরতি ম্যাচে টাইগাররা জয়ী হয় ৫ উইকেটের ব্যবধানে।
প্রথম ম্যাচে সৌম্য (৬১), মুশফিক (৫৫) আর মাহমুদউল্লাহ (৫১)- তিনজন পঞ্চাশের ঘরে পা রাখেন। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত করেন ৪১। আর ফিরতি ম্যাচে টাইগাররা জয়ী হয় ৫ উইকেটে। নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে ২৭০ রানের বড় স্কোর গড়েও পারেনি। তামিম (৬৫), মুশফিক (৬৫), সাব্বির রহমান রুম্মন (৪৫) আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের (৪৬ নট আউট) দৃঢ়তায়। ১০ বল আগে ৫ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
এরপর ২০১৭ সালের জুনে যুক্তরাজ্যে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ২৬৫ রান তাড়া করে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে জিতেছে মাশরাফির দল।
আর সর্বশেষ গত বিশ্বকাপে ২৪৪ রান করে প্রাণপন লড়াই করেও ২ উইকেটে হার মানে টাইগাররা। ম্যাচে সাকিবের ৬৪ ছিল টাইগারদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
ওপরের স্কোরলাইন বলে দিচ্ছে গত পাঁচ বছরে ১০ ম্যাচে শুধু হারেইনি টাইগাররা, দুইবার জিতেছেও। এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো বাকি ৮ বার হার মানলেও কোনোবারই ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামেনি। একবারের জন্য স্কোর লাইন ২০০’র নিচে নামেনি টাইগারদের।
কিন্তু আজকে ২০ মার্চ শনিবার সেই ধারা ভাঙ্গলো। এই ৫ বছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও অন্তত ২২০’র ঘরে পা রাখা টাইগাররা এদিন ডানেডিনে মাত্র ১৩১ রানে অলআউট হয়ে গত ৫ বছরের মধ্যে ১১ নম্বর ম্যাচে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার জন্ম দিল।
শুধু ১৩০-এর ঘরে অলআউট হওয়াই নয়, ব্যক্তিগত পর্যায়েও স্কোরের অবস্থাও খুব খারাপ। একজন ব্যাটসম্যান তিরিশের ঘরেও পৌঁছাতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহর ২৭’ই সর্বোচ্চ। আর মুশফিকুর রহীম করেন ২৩ রান।
রান কম করার পাশাপাশি প্রত্যেকের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ আর আউট হওয়ার ধরন ছিল দৃষ্টিকটু। কেউ দায়িত্ব নিয়ে ডানেডিনের উইকেটের গতি প্রকৃতির সাথে তাল মিলাতে পারেননি। নিউজিলান্ডের সব উইকেটেই বাংলাদেশে চেয়ে গতি ও বাউন্স বেশ থাকে।
সেটা সবার জানা। যারা খেলেন, তারাতো জানেনই ভক্ত, সমর্থকরাও জানেন। সেই বাড়তি পেস ও বাউন্সের সাথে মানিয়ে নিতে একটু রয়ে সয়ে খেলা এবং বলের মেধা ও গুনাগুন বিচার করে ব্যাট চালানো অতি জরুরি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কারো মধ্যে সেই চেষ্টাটাই ছিল না।
দেখে মনেই হয়নি তারা নিউজিল্যান্ডের পিচে খেলছেন। যে দেশের উইকেটের সাথে গড়পড়তা বাংলাদেশের পিচের গতি ও উচ্চতার ফারাক বিস্তর। বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের উইকেটে বল গড় পড়তা কোমর উচ্চতায় থাকে। কখনো বা তারও নীচে আসে বল।
আর নিউজিল্যান্ডের উইকেটে সেই লেন্থে পড়া ডেলিভারিই গড় পড়তা পেটের থেকে বুক সমান উচ্চতায় উঠে আসে। খুব স্বাভাবিকভাবেই আগে সেই বাড়তি বাউন্সের সাথে মানিয়ে নেয়া জরুরি; কিন্তু কেউ সে চেষ্টা করেননি।
যে যার মত খেলেছেন। শট সিলেকশন এবং উইকেটের পেস ও বাউন্সের সাথে মানিয়ে নিতে না পারায় চড়া মাশুল গুনেছেন লিটন, সৌম্য ও মুশফিকসহ অন্য ব্যাটসম্যানরা।
ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট ( ৪/২৭) ভাল জায়গায় বল করলেও তাতে বারুদ ছিল না। আরেক ফাস্ট বোলার জেমস নিশামও আগুন ঝরানো বোলিং করেননি। তারপরও ইনিংস শেষ হয়ে গেছে মাত্র ১৩১ রানে!