ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
জরিপে বালু না মিললে গোমতীতে ইজারা বন্ধ
* নদী রক্ষায় প্রশাসনের অভিযান চলবে * ‘ঘুমন্ত’ পাউবোর প্রতি সবার ক্ষোভ
তানভীর দিপু ।।
Published : Wednesday, 24 March, 2021 at 12:00 AM, Update: 24.03.2021 1:15:22 AM
জরিপে বালু না মিললে গোমতীতে ইজারা বন্ধ
গোমতী নদী থেকে বালু তোলা যাবে কি না, তা নিশ্চিত হতে প্রথমে নদীতে চালানো হবে হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে বা জরিপ। এই জরিপে যদি ফল আসে যে গোমতীতে বালু নেই, তাহলে প্রয়োজনে বালুমহালের ইজারা বন্ধ করে দেয়া হবে। আর নদীর বাঁধরক্ষা মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যে কঠোর অভিযান, তা অব্যাহত থাকবে। গোমতী নদী উদ্ধারে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের চলমান ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান প্রসঙ্গে এসব কথা জানিয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
জানা গেছে, গোমতী নদীর কুমিল্লা সদর উপজেলা অংশে ৬টি বালুমহাল এবং বুড়িচং উপজেলায় একটি মহাল ইজারা দেয়া আছে। তবে এসব বালুমহালের বাইরে নদীর বাঁধ এবং চর থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছিল অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা। এতে নষ্ট হয়েছে শত শত একর উর্বর ফসলি জমি। দিনে এবং রাতে ড্রেজার ও ভেকু ব্যবহার করে পাচার করা হয়েছে শত শত ট্রাক মাটি। বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও থামেনি এই মাটি পাচার। বরং মাটিখেকোরা তাদের কারবার চালিয়ে গেছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। এবারের অভিযানে কি থামবে এই মাটি পাচারÑ কুমিল্লার কাগজ-এর এমন প্রশ্নের দৃঢ় জবাবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা আশাবাদী হতে পারি। গোমতীর কোন কোন জায়গা থেকে মাটি পাচার হচ্ছে, আপনারা তথ্য দেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
এদিকে গোমতী নদী রক্ষায় জেলা প্রশাসনের মাসব্যাপী অভিযান ঘোষণা এবং কার্যক্রম চললেও এখনো ঘুম ভাঙেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। অথচ বছরের পর বছর তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা গোমতীর বাঁধ থেকে কেটে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার ঘনফুট মাটি। জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, গোমতীর বাঁধ রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চললেও কখনো দেখা যায়নি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো একজন সদস্যকে। কিন্তু গোমতী নদীর বর্তমান কী অবস্থা, তা সবচেয়ে বেশি জানার কথা এই প্রতিষ্ঠানের।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা মাসব্যাপী অভিযানের অংশ হিসেবে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। এখন পর্যন্ত ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল, অন্তত ১২টি ড্রাম ট্রাক, ২টি ট্রাক্টর ও ৩টি ভেকু জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পাইপ ও ড্রেজার ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত আমাদের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ যোগ দেয়নি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, নদীর তীরবর্তী ফসলি জমির মাটির উপরের অংশ কেটে নেয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে ওই এলাকার কৃষির। কোনো এক সময় গোমতীর বাঁধে এবং চরে প্রতিবছর কোটি টাকার ফসল উৎপাদন করতেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে মাটি ব্যবসার আগ্রাসনে এই ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। মাটির উপরের অংশ কেটে নিয়ে যাওয়ায় উর্বরতা হারিয়েছে জমিগুলো। লোভের বশে মাটি বিক্রি করে স্থানীয় কৃষকদের এখন মাথায় হাত।
কুমিল্লার সদর উপজেলার কটক বাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য গোমতী নদীর। এই নদীর অববাহিকায় চাষাবাদ করে জীবন যাপন করছে জেলার অগনিত মানুষ। সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এই নদী কৃষিজীবী মানুষকে দিয়েছে জীবিকা। কিন্তু একটি অসাধু চক্র নদীর বাঁধ ও চরের মাটি কেটে বিক্রি করে দেয়ায় অপূরণীয় ক্ষতিতে পড়ছে কুমিল্লার কৃষি।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নবনিযুক্ত উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘যদি নদী প্লাবিত হয়, তাহলে এই জমিগুলো পুনরায় ফিরে আসবে। না হয় এটা কৃষির জন্য মারাত্মক ক্ষতি। তবে কুমিল্লায় আমি নতুন এসেছি; আমি সরেজমিনে গিয়ে জমিগুলো দেখে আসবো। কোনো ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হোক, আমরা সেটা হতে দেবো না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ্ উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গোমতী রক্ষায় এর আগেও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, এবারো নেয়া হয়েছে। শুধু পদক্ষেপ নিলেই হবে না, গোমতী রক্ষায় এই ধরনের অভিযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী সম্পর্কে প্রশাসনকে অভিযোগ করবে। কিন্তু তারা কিছুই করছে না। আমরা আশা করি, গোমতী নদী এবং পুরাতন গোমতী দুটি নিয়ে কুমিল্লাবাসীকে এবার ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে প্রশাসন।’