মাসুদ আলম।।
দ্বিতীয়
ঢেউয়ের করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের লকডাউন
কুমিল্লায় ঢিলেঢালাভাবে শুরু হয়েছে। লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল সোমবার
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও জনসাধারণের মাঝে
সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি। কুমিল্লায় পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা
মাঠে থাকলেও লকডাউনের বাস্তবায়ন দেখা মিলেনি।
এদিকে লকডাউনে পরিবহন কম
থাকায় বিপাকে পড়েছেন অফিসগামীরা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে
খাওয়া মানুষ। লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার গেছে বন্ধ হয়ে।
সরেজমিনে
ঘুরে দেখা যায়, লকডাউনে কুমিল্লা নগরীতে শপিং কমপ্লেক্স, দোকানপাট বন্ধ
রয়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে কিছু দোকানি নানা অজুহাতে দোকান খোলার
সুযোগ নিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও খোলা ছিল ছোটখাটো দোকনপাট ও ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান। স্বাভাবিকের চেয়ে যানবাহনের উপস্থিতি কম থাকায় ইজিবাইক, সিএনজি
অটোরিকশা ও রিকশার দখলে ছিল কুমিল্লা নগরী।
এয়াড়া জেলা ও উপজেলার
কাঁচাবাজারগুলোতে লোকজনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা দেখা
যায়নি। সকাল থেকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুমিল্লা নগরীরসহ বিভিন্ন স্থানে
ছোট ও মাঝারি যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
এদিকে সকাল থেকে নগরীর
পূবালী চত্তর, লিবার্টি মোড়, রাজগঞ্জ, পুলিশ লাইন্স সড়কে অটোরিকশা, সিএনজি ও
প্রাইভেটকার চলাচল করতে দেখা যায়। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে পায়ে হেঁটে
দৈনন্দিন কাজের উদ্দেশ্যে চালচাল করতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে
চলতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ্য থেকে মাইকিং করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন
মোড়ে পুলিশের অবস্থান লক্ষ্য করা গেলেও যানবাহন বা মানুষের অবাধ চলাচল
নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়নি।
এদিকে নগরীর শাসনগাছা, চকবাজার ও
জাঙ্গালীয়া বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি গতকাল। সকাল
থেকে মহাসড়কে যান চলাচল ছিল সীমিত। গণপরিবহন না থাকলেও মালবাহী
ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেট গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা
নগরীর অটোরিকশাচালক সানি জানান, পরিবারের সদস্যরা তার আয়ের উপর নির্ভরশীল।
পকেটে টাকাও নেই। চার-পাঁচটা ট্রিপ মেরে বাজার করে বাড়িতে চলে যাবেন। তিনি
বলেন, ‘করোনা হলেই কী
আর না হলেই কী!
আরেক রিকশাচালক আবদুল কাদের
বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই শ টাকা রুজি হয়েছে। গত বছরের
লকডাউনের সময় এই সময়টার মধ্যে এক শ টাকা রুজি করা কষ্ট ছিল। করোনার ভয়
থাকলেও আমাকে তো রাস্তায় বের হতে হবেই।’
কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে
এক বেলের শরবত বিক্রেতা জানান, এই শরবত বিক্রি করে তিনি তার সংসার চালান।
সোমবার থেকে লকডাউন শুরু, তারপরও প্রশাসনের ভয়ভীতি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে
বাধ্য হয়েছেন। ঘরে বসে থাকলে সংসার চলবে না।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক
মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘লকডাউনে দূরপাল্লার পরিবহন এবং উপজেলা থেকে
জেলা শহরে আশা-যাওয়ার সকল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র শহরে কিছু রিকশা ও
অটোরিকশা চলাচল করছে। সেই সাথে কুমিল্লার শপিংমল ও দোকানপাটগুলোও বন্ধ
রয়েছে। লকডাউনে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে প্রথমদিন সোমবার জেলা
প্রশাসনের তিনটি মোবাইল কোর্ট টিম ও পুলিশ সদস্যরা মাঠে রয়েছে। আমিও শহরের
বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দোকানপাট বন্ধ পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘোষিত লকডাউনে সরকারের সকল নির্দেশনা জনগণের মাঝে প্রয়োগ করে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’