ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সুদ কম তবুও ব্যাংকে আমানত রাখার চাপ
Published : Thursday, 8 April, 2021 at 12:00 AM
করোনাকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যাংকের আমানত। দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলো আমানতের ওপরে সুদহার কমিয়ে দিলেও মানুষ টাকা রাখার জন্য ব্যাংককেই বেছে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত একবছরে তথা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত জুলাই-জানুয়ারি এই সাত মাসে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত একবছরে ৮৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এরপরও ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিশাল এই তারল্যের একটি বড় অংশ বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। বাকি টাকা ব্যাংকগুলোতে অলস পড়ে রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনাকালে আয় কমে গেছে। যে কারণে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া খরচ কমিয়ে দিয়েছে। আর ভবিষ্যতের বিপদ থেকে সুরক্ষা থাকার জন্য অল্প অল্প করে ব্যাংকে জমাচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীরাও সব ধরনের বিনিয়োগ ও খরচের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে সঞ্চয় শুরু করেছে। বিদেশ থেকে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় উত্তোলন হয়েছে কম। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের মাঝেও ব্যাংকগুলো আমানতের মধুর চাপ সহ্য করছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘মানুষের আয় কমলেও নানা কারণে ব্যাংকের প্রতি আস্থাও বেড়েছে। প্রবাসীরা যে টাকা পাঠাচ্ছে, তার একটা অংশ ব্যাংকে থেকে যাচ্ছে। ফলে আমানতে সুদ হার কমলেও ব্যাংকে টাকা রাখার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।’ এছাড়া করোনা সবাইকে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়ার কারণেই সঞ্চয়ের প্রবণতা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার মাঝে প্রবাসী আয় অনেক বেশি এসেছে। এই টাকার বড় অংশই ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা হয়েছে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, অপরদিকে ব্যাংকেও আমানত বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে সোনালী ব্যাংকের। গত ডিসেম্বর শেষে এই ব্যাংকটিতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। একবছরে ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে ইসলামী ব্যাংকে। গত জানুয়ারির শেষে ব্যাংকটিতে আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনে ছিল ১ লাখ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের শুরুতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চের শেষ দিকে লকডাউন শুরু হয়।  তখন থেকে নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন অনেকেই। চলমান ব্যবসাও অনেকে বন্ধ করে দেন। ফলে ব্যাংকে তারল্যের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়ে গত ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯০ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। একবছর আগে তথা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে আমানত ছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি তথ্য বলছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা। আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে আমানত বেড়েছিল ৭৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। তারও আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছিল ৪০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।