দেশে দৈনিক শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যায় এক দিনের মাথায় নতুন রেকর্ড হয়েছে; টানা দ্বিতীয় দিনের মত ৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জনে।
আর গত এক দিনে আরও ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশে। তাতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ হাজার ৪৪৭ জনে।
বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর এ বছর মার্চের শেষে প্রথমবারের মত এক দিনে পাঁচ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর আসে। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৯ মার্চ ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়।
এরপর মাত্র এক সপ্তাহে সেই তালিকায় যোগ হয়েছে আরও অর্ধল নাম। মঙ্গলবার দেশে রেকর্ড ৭ হাজার ২১৩ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে দেশে মোট শনাক্ত রোগী সাড়ে ৬ লাখ পেরিয়ে যায়। এক দিনের মাথায় বুধবার দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড হল।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল সরকার। এ বছর ৩১ মার্চ তা নয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর মঙ্গলবার এক দিনে ৬৬ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা এবাৎকালের সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৩ হাজার ২৫৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৯ জন হয়েছে।
বিশ্বে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৩ কোটি ২৫ লাখ পেরিয়েছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৪০তম অবস্থানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ২৩৭টি ল্যাবে ৩৪ হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীা হয়েছে ৪৮ লাখ ৮২ হাজার ৫৬৫টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ০২ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীা করা হয়েছে ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫৩ টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ১২ লাখ ১৭ হাজার ৯১২টি।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ আর নারী ২৪ জন। তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে।
তাদের মধ্যে ৪০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর, ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
মৃতদের মধ্যে ৪১ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ১ জন বরিশাল বিভাগের, ৩ জন সিলেট বিভাগের এবং ২ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৯ হাজার ৪৪৭ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৮২ জনই পুরুষ এবং ২ হাজার ৩৬৫ জন নারী।
তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৩০৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়াও ২ হাজার ৩২৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১ হাজার ৫৯ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪৬৮ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৮৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৭০ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৯ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।
এর মধ্যে ৫ হাজার ৪৩৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৬৯৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৫১৭ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৯৭ জন খুলনা বিভাগের, ২৮০ জন বরিশাল বিভাগের, ৩৩২ জন সিলেট বিভাগের, ৩৮১ জন রংপুর বিভাগের এবং ২০৭ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।