মাদ্রাসা ছাড়ছে শিক্ষার্থীরা
Published : Friday, 9 April, 2021 at 12:00 AM
সরকারি কওমি মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষণার পর মাদ্রাসা ছাড়তে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে যাদের বাড়ি দূরে তারা লকডাউনের কারণে পড়েছেন বিপত্তিতে। তাদেরকে আপতত মাদ্রাসায় থাকার সুযোগ দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে মাদ্রাসাগুলো। এ পরিস্থিতির জন্য বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) দুষছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা। ৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ২২২টি কেন্দ্রে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে এ পরীক্ষা শুরু হয়। লকডাউন ও মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষণায় একাধিকবার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদেরও ছিল ক্ষোভ।
বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফেরা শুরু করেন। রাজধানীর বেশ কিছু মাদ্রাসা ঘুরে দেখো গেছে, শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে যাদের বাড়ি দূরে তারা আছেন দুশ্চিন্তায়।
২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ১৮ দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন কওমি মাদ্রসাগুলো দাবি করে আসছিল তারা এই প্রজ্ঞাপনের আওতামুক্ত। সে সময় সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছিলেন, কওমি মাদ্রসাগুলোও বন্ধ রাখতে হবে। এরপর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করে ৪ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। লকডাউনের মধ্যেও খোলা ছিল কওমি মাদ্রাসাগুলো। পরে ৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে এতিমখানা ছাড়া দেশের সব কওমি, আবাসিক-অনাবাসিক মাদ্রাসা বন্ধ রাখার আলাদা নির্দেশ দেয়।
মাদ্রাসা বন্ধ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ক্ষোভ মূলত কওমি মাদ্রাসা বোর্ড এবং আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের ওপর। তাদের মতে, লকডাউনের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করলে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফেরা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা বাড়ি যাচ্ছেন। এ ছাড়াও অন্যান্য শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীকেও মাদ্রাসার ভেতর ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ অন্যান্য স্থানের মাদ্রাসাগুলোতে।
মিরপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়েন রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি বলেন, আমার বাড়ি টাঙ্গাইল, অনেক কষ্ট হয়েছে ঢাকায় আসতে। এখন ছেলেকে নিয়ে যাবো। তারা যদি লকডাউনের আগে ছুটি দিতো তবে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, মাদ্রাসা এখন বন্ধ। অভিভাবকরা এসে বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকের বাড়ি দূরে। লকডাউনে তারা আসতেও পারছেন না। সেসব শিশুরা আপতত মাদ্রাসাতেই আছে।
কওমি মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, প্রায় সকল মাদ্রাসায় একই চিত্র। বেফাক মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষণা না দেওয়ায় লকডাউনে মাদ্রাসা খোলা ছিল। এখন সরকার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু লকডাউনে গাড়ি বন্ধ থাকায় সবার পক্ষে বাড়ি যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যাদের বাসা মাদ্রাসার কাছে শুধু তারাই মাদ্রাসা ছেড়েছে।
কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিছু কিছু মাদ্রাসায় হেফজ ও মক্তব বিভাগ এখনও চালু রয়েছে। তবে বাইরে থেকে যাতে কেউ টের না পায় সেজন্য মূল ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসার বাইরে বের হওয়া বন্ধ ও ভেতরে চলাচল নিয়ন্ত্রিণ করা হয়েছে। তবে এমন মাদ্রাসার সংখ্যা কতো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বরাবরই মাদ্রাসা বন্ধের বিপক্ষে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক)। গতবছরও মাদ্রাসার খোলার রাখতে তৎপরতা চালায় হেফাজত-বেফাক। পরে সরকারও মাদ্রাসা খোলার অনুমতি দেয়।
এবারও সরকারের মাদ্রাসা বন্ধের প্রজ্ঞাপনের পর কোনও নির্দেশনা দেয়নি বেফাক। এ বিষয়ে জানতে বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, সহ সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মাওলানা মোসলেহ উদ্দীন রাজুকে কলা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।