
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পারিবারিক কবরস্থানে পিতা-মাতার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের
প্রেসিডিয়াম সদস্য, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের ৫ বারের এমপি ও
সাবেক আইন মন্ত্রী এড. আবদুল মতিন খসরু। বৃহস্পতিবার (১৫) এপ্রিল বাদ আসর
নিজ গ্রাম ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মীরপুরে পঞ্চম জানাজা ও রাষ্ট্রীয় সম্মান
গার্ড অব অনার প্রদান শেষে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল
সাড়ে ৮টায় ঢাকার বক্সী বাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে প্রথম জানাজা ও সকাল
১০টায় সুপ্রিম কোর্ট চত্ত্বরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আবদুল মতিন খসরুর মরদেহ
নিয়ে আসা হয় কুমিল্লায়। বাদ জোহর বুড়িচং আনন্দ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে
তৃতীয় জানাজা, বিকাল ৪ টায় ব্রাহ্মণপাড়া সরকারি হাইস্কুল মাঠে ৪র্থ জানাজা
এবং বাদ আসর মীর গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন মসজিদ মাঠে ৫ম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
করোনা পেন্ডামিকের এ সময়টাতে লকডাউন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করে প্রতিটি
জানাজাতেই অসংখ্য মুসল্লি ভিড় জমান।
কুমিল্লার বুড়িচং ও
ব্রাহ্মণউপজেলার পৃথক স্থানে অনুষ্ঠিত তিনটি জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত
আলোচনায় অংশ নেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, জেলা-উপজেলা আওয়ামী
লীগ, বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এসময় বক্তারা বলেন, এডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর বিদায় বাংলাদেশ ও কুমিল্লার
রাজনৈতিক অংগণে যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে তা পূরণ হবার নয়। তিনি কুমিল্লার
রাজনীতিতে সৎ এবং স্বচ্ছ ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশের আইনজীবীদের জন্যও
তিনি একজন আদর্শ। তাঁর মৃত্যুতে সারাদেশের মানুষ শোকাহত।
প্রতিটি জানাজার নামাজ শেষে প্রশাসন, রাজনৈতিক ও আইনজীবী নেতৃবৃন্দ প্রয়াত আইনজীবী মতিন খসরুর কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান।
এর
আগে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় মতিন খসরুর দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্নআওয়ামী লীগের
সভাপতিম-লীর সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি, সংসদ
সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর দ্বিতীয় জানাজা
অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল
বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম,
বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ঢাকা দণি
সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, ব্যারিস্টার এএম
মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার
রুহুল কুদ্দুস কাজল, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এআইজি মাহফুজুর রহমান আল মামুন
প্রমুখ।
জানাজার শুরুতে মতিন খসরুর ছেলে আব্দুল মোনেম ওয়াসিফ বলেন, আশা
করি কাজের মাধ্যমে বাবা আপনাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন এবং তার কোনও ভুল-ত্রুটি
হলে সবাই মা করবেন।
জানাজা শেষে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন খসরুকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের প থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
পরে
মতিন খসরুর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতির পে তার সামরিক সচিব,
প্রধানমন্ত্রীর পে তার সামরিক সচিব, স্পিকারের ও ডেপুটি স্পিকারের প,ে
আওয়ামী লীগের পে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক
লীগ, কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী
আইনজীবী ফোরাম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ফোরাম, আবদুল মতিন খসরু
অ্যাসোসিয়েটসসহ বিভিন্ন সংগঠন। এর আগে, সকাল ৮টার দিকে মতিন খসরুর নিজ
বাসভবন এলাকা বকশীবাজারে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা থেকে স্বজনরা
মরদেহ নিয়ে ফেরার পর দুপুর ২টায় কুমিল্লার বুড়িচং আনন্দ পাইল উচ্চ বিদ্যালয়
মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জানাজা। জানাজা-পূর্বে আলোচনায় অংশ নেন কুমিল্লার
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, দক্ষিণ জেলা
আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, , বুড়িচং উপজেলা
আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হাশেম খান, সাধারণ সম্পাদ আখলাক হায়দার, সোনার
বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সালেক মোঃ সেলিম রেজা সৌরভ, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর
রহমান মিঠু, কুমিল্লা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন ফেরদৌস,
বুড়িচং থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জনিয়ার আল আমিন, আওয়ামী লীগ নেতা
এডভোকেট রেজাউল করিম, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর
রহমান খান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তৈয়ব অপিসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলা
পর্যায়ের আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা। এছাড়া বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
মোসা. সাবিনা ইয়ামিন, বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক
এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া কেন্দ্রিয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত
মাহমুদ, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক কবির
হোসেন, ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের
নেতা-কর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা ও জানাজার নামাজ শেষে প্রশাসন ও
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রয়াত আইনজীবী আবদুল মতিনের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি
জানান। পরে তাকে বিশিষ্ট এই রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের মরদেহ তার নিজ বাড়ি
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিকাল ৪ টায় ব্রাহ্মণপাড়া
সরকারি হাইস্কুল মাঠে ৪র্থ জানাজা এবং বাদ আসর মীর গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন
মসজিদ মাঠে ৫ম জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে পিতা-মাতার পাশে দাফন
করা হয়।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ মার্চ সকালে ঢাকায়
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের
প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সভাপতি
আবদুল মতিন খসরু এমপি। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে গত ২৫ মার্চ
রাতে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে শারীরিক অবস্থায় উন্নতি হওয়ায় ৩১ মার্চ বুধবার
কেবিনে নেওয়া হয়। এরপর তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়।
গত ১ এপ্রিল করোনা
রিপোর্ট নেগেটিভ আসে খসরুর। কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি
হলে ফের ৬ এপ্রিল আইসিইউতে নেওয়া হয় তাঁকে। এরপর তাঁর শারীরিক অবস্থার আরো
অবনতি হলে গত ১৩ এপ্রিল তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানেই বুধবার
বিকেল পৌনে ৫টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।