ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
‘বাড়ি ফিরতে রাত হবে’ বলে ফিরলো লাশ হয়ে
Published : Wednesday, 21 April, 2021 at 7:25 PM, Update: 21.04.2021 7:35:52 PM
‘বাড়ি ফিরতে রাত হবে’ বলে ফিরলো লাশ হয়ে শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
ঘটনার সূত্রপাত ২২ মার্চ সন্ধ্যায়। বাড়ি থেকে মাকে বলে যান বাড়িতে ফিরতে রাত হবে, চিন্তা না করতে। এরপর রাত সাড়ে ৮টায় অলিউল্লাহ স্বাধীন ফোন করে জানান, ‘মা আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি নতুন চাকরি হয়েছে’ তোর সাথে আর কে আছে মা জানতে চাইলে স্বাধীন বলে, তুমি অত কিছু বুজবা না আমি সকালে ফোনে সব জানাবো, তোমরা চিন্তা করো না, বলে লাইন কেটে দেয়। এরপর স্বাধীনকে চাকরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বান্দরবানের লামা উপজেলার রুপসী পাড়া ইউনিয়নের প্রত্যান্ত এলাকা শিংঝিড়িতে। এরপর তাকে সেখানে আটকিয়ে তার নম্বর থেকে স্বাধীনের বাড়িতে ফোন করে দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাইতে থাকে আরিফ ও ফয়েজ নামে দুই ঘাতক। এভাবে ফোনে টানা দুইদিন স্বাধীনের ফোন নম্বর থেকে কল করে দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে চাপ দিতে থাকে স্বাধীনের মা বাবাকে। স্বাধীনের মা-বাবা বার বার ছেলের সাথে কথা বলতে চাইলেও তাকে না দিয়ে বলা হয় আগে বিকাশে টাকা পাঠাও তা না হলে স্বাধীনকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে, সে এখন আমাদের হাতে বন্দী আছে। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরে আনুমানিক (২৫ মার্চ) রাতের কোন এক সময় স্বাধীনের গলায় পেন্টের বেল্ট লাগিয়ে আধমরা অবস্থায় শিংঝিড়িতে এলাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এরপর থেকে স্বাধীনের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় (২৮ মার্চ)  সকালে স্বাধীনের বড় ভাই মো. জিলানি মিয়া বুড়িচং থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করেন (যার নং ১১৩৬)। সাধারণ ডায়রির সূত্রধরে স্বাধীনকে খুঁজতে থাকে বুড়িচং থানা পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বান্দরবানের লামা থেকে ঘাতক আরিফ ও ফয়েজকে আটক করে লামা থানা পুলিশের সাহায্যে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাত ২টার দিকে শিংঝিড়ি এলাকা থেকে মাটিচাপা দেয়া অবস্থায় স্বাধীনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ‘বাড়ি ফিরতে রাত হবে’ বলে ফিরলো লাশ হয়ে
নিহত অলিউল্লাহ স্বাধীনের সাত ভাই বোনের মধ্যে স্বাধীন সবার ছোট। ঘাতক আরিফ কসবা উপজেলার মৃত মদন খা’র পুত্র। বাবা মারা যাওয়ায় মাকে নিয়ে দেবিদ্বার উপজেলার বিষ্ণপুর নানার বাড়িতে থাকতো। ঘাতক আরিফুলের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ছেলেকে কয়েকদিন আগে কুমিল্লা ইপিজেডে চাকরি করার জন্য আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসি। সে কার চক্রে পড়ে এমন ঘটনা ঘটালো আমি কিছুই জানিনা।  
নিহত হাফেজ স্বাধীনের বাবা মো. মোবারক মিয়া বলেন, আমার জানাজা পড়াবে বলে ছেলেকে মাদরাসায় পড়িয়েছিলাম। সে ৩০ পাড়া কোরআনে হাফেজও হয়েছিলো। ছেলেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে ঘাতক আরিফ ও ফয়েজ আমার ছেলেকে জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই। স্বাধীনের মা লুৎফা বেগম বলেন, যাওয়ার সময় আমাকে বলে যায়, ফিরতে রাত হবে চিন্তা না করতে। পরে রাতে ফোন করে জানায়, চট্টগ্রামে নতুন চাকরি হয়েছে, সেখানে যাচ্ছে। আর কিছু বলেনি। বুড়িচং থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আমাদের থানা পুলিশ বান্দরবানে গিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করেছে। ঘটনাস্থল লামা থানায়, তাই ওই থানায় এ বিষয়ে হত্যা মামলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে দেবিদ্বার উপজেলার বিষ্ণপুর থেকে হাফেজ স্বাধীনকে কৌশলে নেওয়া হয় বান্দরবানের লামা উপজেলায়। কিন্তু দাবীকৃত টাকা না পেয়ে খুন করে মাটি চাপা দেওয়া হয় স্বাধীনের মরদেহ। ২৫ দিন পর  গত বুধবার মাটির নিচ থেকে হাফেজ মো. অলি উল্লাহ স্বাধীনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
‘বাড়ি ফিরতে রাত হবে’ বলে ফিরলো লাশ হয়ে