
শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
কুমিল্লার দেবিদ্বারে আল ইসলাম হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসকের ভুলে এ প্রসুতির মৃত্যুর ১৩ দিনের মাথায় আবারও ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সদরের মেডিকেয়ার সেন্টারে চিকিৎসকের ভুল অপারেশন ও অবহেলায় মো. আবুল কাশেম (১৮) নামের এক কিশোরের মুত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সে পৌরসভার পূর্ব ভিংলাবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী নসু মিয়ার ছেলে। বুধবার রাত ১২টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয় ।
এদিকে, একটি প্রভাবশালী মহল এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত কয়েকদিন আগে প্রসুতি শারমিন আক্তারের মৃত্যুর ঘটনাটি ৬ লক্ষ টাকায় আপোষ-মিমাংসা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে ওই মহলটির বিরুদ্ধে।
এটিও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সমাধান করার চেষ্টা করছেন ওই মহলটি। একে একে অপচিকিৎসায় দুটি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেবিদ্বারের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে নানা বিরুপ মন্তব্য করছেন অনেকেই।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত (২০এপ্রিল) মঙ্গলবার সকাল ৬টায় আবুল কাশেমের এপেন্ডিসাইটিস ব্যাথা শুরু হলে প্রথমে তাকে দেবিদ্বার মেডিকেয়ার সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন সন্ধ্যায় তার এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. মো. ইসরাফিল সরকার। পরে এ অপারেশনে তার ব্যাথা আরও বেড়ে যায়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে পরদিন দুপুরে ডা. ইসরাফিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন আমি এখানে আছি’। পরে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ‘আমি কুমিল্লা মুন হাসপাতালে আছি আপনারা একটু অপেক্ষা করেন’। পরে প্রায় ২ঘন্টা পর তিনি ফোন করে জানান ‘সরি পরীক্ষা ভুল হইছে’ আপনি এক কাজ করেন হাসপাতালের ৩তলায় যান ওখানে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে ওখানে নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করান।
নিহতের বড় ভাই হাবিব জানান, এভাবে ডা. ইসরাফিলের ভুল অপারেশন ও অবহেলায় আমার ভাইকে জীবন দিতে হয়েছে। সে আমাকে একটার পর একটা পরীক্ষা দিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল, এক রুম থেকে অন্য রুমে ঘুরিয়েছে সঠিক সময়ে কোন চিকিৎসা দেয়নি। নিহত কাশেমের বাবা নসু মিয়া বলেন, আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে, আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবীর জানান, ডা. ইসরাফিল দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নন। তিনি বাহিরে প্রাইভেট একটি হাসপাতালে চেম্বার করেন। সেখানেই তিনি এ রোগীর অপারেশন করিয়েছে। এরপরও যদি রোগীর কোন স্বজন আমাদের কাছে এসে অভিযোগ দায়ের করে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
কুমিল্লায় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসকদের ভুল অপারেশনের রোগী মৃত্যুর বিষয়ে কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদৎ হোসেন শুক্রবার বলেন, ভুল অপারেশন কিংবা চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে কেউ তাকে অবহিত করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিন জানান, এ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক ইসরাফিল দেবিদ্বারের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করা ও রোগী মৃত্যুর বিষয়টি তাঁকে কেউ অবহিত করেনি। কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, দেবিদ্বার সদরের আল ইসলাম হাসপাতালে সিজারিয়ারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে গজ (মপ) রেখে সেলাই দেয়ার ৫ মাসপর চলতি মাসের ১৩ এপ্রিল শারমিন আক্তার নামে এক প্রসুতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই মাত্র ১৩ দিেেনর মাথায় আবারও ভুল চিকিৎসায় এ কিশোরের মৃত্যু হয়।