
প্রতিনিয়ত
বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের তিকর প্রভাব। পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমেই বেড়ে
চলেছে। এর ফলে যেমন মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, তেমনি বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের
উচ্চতা। অনেক দ্বীপদেশ এরই মধ্যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক দেশেরই
উপকূলীয় নি¤œাঞ্চল সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। বাংলাদেশের
উপকূলীয় নি¤œাঞ্চলেও তার প্রভাব ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের
উত্তরাঞ্চলে বাড়ছে খরা প্রবণতা। বদলে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের ধরন। বাড়ছে
বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ও তীব্রতা। এই অবস্থায় কার্বন নিঃসরণ কমানো,
তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করা ও কমিয়ে আনা এবং বিশ্বকে বেশি তিগ্রস্ত দেশগুলোর
পাশে দাঁড়ানো জরুরি হয়ে উঠেছে। অথচ বিশ্ব পরিসরে এত দিন এক ধরনের অনৈক্যই
দেখা যাচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস
চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। উন্নত দেশগুলোর প থেকে সবচেয়ে তিগ্রস্ত
দেশগুলোকে সহায়তার প্রদানের প্রতিশ্রুতি যেমন কম ছিল, সেই প্রতিশ্রুতি রার
হার ছিল আরো কম। এমন প্রোপটে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো
বাইডেন কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরে এসেছে
প্যারিস চুক্তিতে। গত বৃহস্পতিবার জো বাইডেন দুই দিনের জলবায়ুবিষয়ক
ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস
গ্যাস নির্গমন অর্ধেক (৫০-৫২ শতাংশ) কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আশা করা
হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগী ভূমিকায় কার্বন নির্গমনকারী অন্যান্য দেশও
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিতে উৎসাহিত হবে।
‘লিডার্স
সামিট অন কাইমেট’ শিরোনামে আয়োজিত ভার্চুয়াল এই সম্মেলনে বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা অংশ নেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত দেশগুলোকে উচ্চাভিলাষী
কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানান। কাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এবং
ভি২০ (দ্য ভালনারেবল ২০)-এর চেয়ার হিসেবে শেখ হাসিনা সম্মেলনে আরো কিছু
পরামর্শ দেন। এর মধ্যে আছে তিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থে প্রতিশ্রুত বার্ষিক
১০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ
মোকাবেলায় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নের েেত্র বিশেষ ছাড়
দেওয়া এবং সবুজ অর্থনীতি ও কার্বন নিরপে প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে
বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তর করা। সম্মেলনে জো বাইডেন ২০৫০
সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক খাতকে কার্বনমুক্ত করার বৃহত্তর
পরিকল্পনার কথা জানান। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ২০৬০ সালের মধ্যে চীনকে
কার্বন নিরপে করার আগের প্রতিশ্রুতিই আবার তুলে ধরেন। একই ধরনের
প্রতিশ্রুতি দেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্বনেতারা।
জলবায়ু পরিবর্তনের
ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ২০১৫ সালে
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রা দুই ডিগ্রি
সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছিল। কপ-২১ নামে পরিচিত ওই
সম্মেলনে উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে কমিয়ে আনার কথাও বলা
হয়েছিল। কিন্তু এই ল্য পূরণে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এত দিন এক ধরনের
উদাসীনতা দেখা গেছে। আশা করা যায়, নতুন উদ্যোগে সেই উদাসীনতা কিছুটা হলেও
কমবে। উন্নত দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণের কারণে তিগ্রস্ত দেশগুলো
আবারও বসবাসযোগ্যতা ফিরে পাবে, এমনটাই সবার প্রত্যাশা।