
লকডাউন ও কঠোর
বিধি-নিষেধ আরোপের পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার আবার কমতে শুরু
করেছে। এক দিনে মৃতের সংখ্যা ১১২ হয়েছিল, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত
পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৮৮ জন। এ সময় আক্রান্তের হার ছিল ১৪ শতাংশ,
যা দিনকয়েক আগেও ছিল ২৩ শতাংশের বেশি। বিশেষজ্ঞরা আশা করছিলেন, এভাবে চলতে
থাকলে শিগগিরই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে।
কিন্তু এরই মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য প্রয়োজন বিবেচনায় সরকার
লকডাউন শিথিল করার বেশ কিছু পদপে নিয়েছে। গতকাল রবিবার থেকে শপিং মল,
বিপণিবিতান খুলে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২৯ এপ্রিল থেকে গণপরিবহন
চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। ট্রেন চলাচল আবার শুরু করারও চিন্তা-ভাবনা
চলছে। ফলে দেশের করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়
প্রকাশ করেছেন।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনা মহামারি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।
প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদন
অনুযায়ী এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৪৫ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা দুই
হাজার ৬২১ হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি
দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেখানে ট্রিপল মিউটেন্ট যে ভেরিয়েন্ট
বা ধরন পাওয়া গেছে, তা অতিমাত্রায় সংক্রামক এবং রোগীর মৃত্যুহারও বেশি। সেই
ধরন এরই মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কি না তা এখনো জানা যায়নি।
বাংলাদেশে দণি আফ্রিকার যে ধরনটি বেশি ছড়িয়েছে সেটিও অনেক বেশি সংক্রামক।
এসব বিবেচনায় বলা যায়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। যেকোনো সময় তা খুব
খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে। তাই আমাদের আরো অনেক বেশি সাবধান থাকতে হবে।
ইসরায়েল,
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ যেসব দেশে টিকা প্রদানের হার শতভাগের কাছাকাছি
বা ৬০-৭০ শতাংশ, সেসব দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অনেক কমেছে। আমরা টিকা
প্রদানের দিক থেকেও অনেক পিছিয়ে আছি। টিকা সংগ্রহের েেত্র আমরা সম্পূর্ণ
নির্ভরশীল ছিলাম ভারতের ওপর। ভারত এই পরিস্থিতিতে টিকা রপ্তানি করতে পারছে
না। এখন আমরা অন্যান্য টিকা আমদানি এবং রাশিয়ার স্পুনিক ভি দেশে তৈরির
উদ্যোগ নিচ্ছি। নতুন উদ্যোগের টিকা কবে নাগাদ পর্যাপ্ত পরিমাণে হাতে আসবে,
তা এখনো বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমাদের জন্য মহামারি থেকে বাঁচার একমাত্র
উপায় হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধিগুলো সঠিকভাবে মেনে চলা। শপিং মল খুলে, গণপরিবহন
চালু করে সেগুলো কতটা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়েও অনেক বিশেষজ্ঞ সন্দেহ
প্রকাশ করেছেন।
এটাও ঠিক, জীবিকার পথ খোলা রাখতে হবে। তা না হলে অন্যদিক
থেকে জীবনসংকট তৈরি হবে। আবার মহামারি থেকেও মানুষকে বাঁচাতে হবে। দুয়ের
মধ্যে সমন্বয় করে কিভাবে সর্বোচ্চ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার
পরিকল্পনা করতে হবে এবং সেই পরিকল্পনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।