ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
মুখোমুখি জীবন-জীবিকা
Published : Monday, 26 April, 2021 at 12:00 AM
মুখোমুখি জীবন-জীবিকাড. মো. আবু তাহের ||
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া লকডাউন চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে কায়দায় সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে আমাদের মতো জনবহুল দেশে ওই ধরনের লকডাউন হয়তো সম্ভব নয়। উপরন্তু উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশের জনগণ তত সচেতনও নয়। এটা সত্য যে, করোনা মোকাবিলায় আমরা প্রো-অ্যাকটিভ সিদ্ধান্ত না নিয়ে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পেছনে পেছনে ছুটছি। জীবন-জীবিকা দুটো রার জন্য বিচ্ছিন্ন ও বিপ্তি পদপে না নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য। যে দেশে এখনও এক-পঞ্চমাংশ (২১ শতাংশ) মানুষ দারিদ্র্যসীমার (করোনার কারণে বর্তমানে এ হার দ্বিগুণ হয়েছে) নিচে বসবাস করে, সেখানে জীবন-জীবিকার ভারসাম্য রা করা শুধু কঠিন নয়; অত্যন্ত দুরূহ বটে। লকডাউনের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের পথ বন্ধ হলে কী হবে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া খুবই জরুরি। তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা না করে আরোপিত বিধিনিষেধ যথাযথভাবে কার্যকর করা অসম্ভব। ুদ্র আয়ের মানুষ ও শ্রমজীবী মানুষ ইতোমধ্যে লকডাউনের বিরুদ্ধে বিােভ করেছে।
করোনার কারণে গত এক বছরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা যেখানে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সেখানে সংক্রমণ রোধে আরোপিত বিধিনিষেধ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতোই। করোনা থেকে জীবন বাঁচানোর চেয়ে ুধা থেকে জীবন বাঁচানো তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে। তাই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাহায্য-সহযোগিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহারের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা কঠিনতর হবে।
করোনার পুরো বিষয়টাই অনিশ্চয়তাপূর্ণ। করোনা মহামারি বিশ্ব থেকে নির্মূল হবে কবে কেউ জানে না। কখনও মনে হয়েছে যে, করোনার সংক্রমণ কমে আসছে; আবার পরণে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটিই বেড়েছে। বর্তমানে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে জীবন ও জীবিকা।
বলার অপো রাখে না, করোনার কারণে বিশ্বে দরিদ্রতা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে সমাজে দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠী জীবন ও জীবিকা নিয়ে এখন আরও বেশি বিপদের মুখে পড়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে নানা পরিবর্তন ও প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে অনেক দূর এগিয়েছে সত্য; তবে বেসরকারি বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য ও শিা খাতে ব্যয় বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার েেত্র যথেষ্ট পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
ওয়েলথ-এক্স'র বাংলাদেশে ধনিক শ্রেণির অস্বাভাবিক উত্থান ঘটেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সে তুলনায় কর্মসংস্থান হয়নি, কমেনি সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য; বরং বাড়ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল এবং প্রান্তিকসহ নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবনমানকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন কি আগামীতে টেকসই হবে; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার কতটুকু পরিপূর্ণ হবে; করোনা ব্যবস্থাপনাসহ সংক্রমণ ও মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে সম হবে কিনা; কেবল জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব নয়, আয় ও সম্পদের বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্তি সমতাভিত্তিক মানবিক উন্নয়ন সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে কিনা ? এসব প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সর্বেেত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ, মানসম্মত উচ্চশিা নিশ্চিতকরণ, করোনা ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদপে গ্রহণ; অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রত্যেকের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পাদন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীল রাজনীতি প্রতিষ্ঠাসহ সর্বোপরি কর্মমুখী পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশলের যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর এ দেশের মানুষ সম্পূর্ণ আস্থাশীল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার সমন্বয় ঘটিয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।

সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন