
করোনা
মহামারি সারা বিশ্বেই এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। জীবনহানির
পাশাপাশি অর্থনীতিকেও পঙ্গু করে দিচ্ছে। কবে এই মহামারি সম্পূর্ণ
নিয়ন্ত্রণে আসবে তা-ও বলা যাচ্ছে না। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা আবিষ্কার
হলেও তা এখনো বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। অর্থনীতিতে এর যে
সুদূরপ্রসারী তিকর প্রভাব পড়ছে, উন্নত বিশ্ব হয়তো তা তাড়াতাড়িই কাটিয়ে উঠতে
পারবে; কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর পে তা কাটিয়ে ওঠা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
এমন প্রোপটে গত সোমবার শুরু হয়েছে জাতিসংঘ-এসকাপের ৭৭তম অধিবেশন। ভার্চুয়াল
পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগে
থেকে ধারণ করা ভিডিও বিবৃতিতে মহামারি মোকাবেলায় উন্নত বিশ্ব ও উন্নয়ন
অংশীদারদের ভূমিকা জোরদার করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায়
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নপন্থা, দ নীতি ও কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানান।
এশিয়া-প্রশান্ত
মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকাপ) তিন দিনের
অধিবেশনের প্রতিপাদ্য হলো ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক
সহযোগিতার মাধ্যমে সংকট থেকে আরো ভালোভাবে উত্তরণ’। সম্মেলনে বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সেগুলো হলো—এক. উন্নত বিশ্ব,
উন্নয়ন অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কভিড মহামারি থেকে
রার সংগ্রামে এগিয়ে আসা; দুই. উন্নয়ন পদ্ধতি হওয়া উচিত যেকোনো সংকট থেকে
আরো ভালোভাবে উত্তরণের জন্য আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক এবং
পরিবেশবান্ধব; তিন. এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি শক্তিশালী ও
সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য দ নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা; চার.
বাণিজ্য, পরিবহন, জ্বালানি ও আইসিটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির েেত্র
নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করা। কভিড-১৯-এর আক্রমণ মোকাবেলায় তাঁর সরকারের
পদেেপর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সামাজিক সুরা বৃদ্ধি,
চাকরি ধরে রাখা এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য জিডিপির প্রায় ৪.৪৪
শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা
করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও
কভিড-১৯-এর য়তি থেকে পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশকে অবাধ ও টেকসই এলডিসি দেশে
উত্তরণের জন্য প্রস্তুত করা, টেকসই উন্নয়ন ল্য (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১
সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার দিকে গতিপথ নির্ধারণের কৌশল
অন্তর্ভুক্ত ছিল।’ শেখ হাসিনা একই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক
বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গার টেকসই প্রত্যাবাসনে মনোনিবেশ করার জন্য
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
করোনা মহামারি এমন
একসময়ে বাংলাদেশকে আঘাত করেছে, যখন আমরা উন্নয়নের রোডম্যাপ অনুসরণ করে
দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলাম। বৈশ্বিক এই মহামারি থেকে উদ্ধার পেতে বৈশ্বিক ও
আঞ্চলিক উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই জোট
এ েেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা চাই, সম্মিলিত ও
সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই অঞ্চল করোনার আঘাত মোকাবেলা করুক।