মাসুদ
আলম।। সেমাইয়ের বাজারে চাহিদা কম থাকায় উৎপাদনে অচলাবস্থা বিরাজ করছে
কুমিল্লার কারখানাগুলোতে। ঈদ উপলক্ষে মাস ব্যাপী দিন-রাত হরদম সেমাই
উৎপাদনে যেখানে ব্যস্ত থাকতেন কারিগর ও শ্রমিক, সেখানে এবার কুমিল্লার
বিসিক শিল্পনগরীর অধিকাংশ কারখানা ১২ রোজা অতিক্রম করতেই উৎপাদন থেকে সরে
দাঁড়িয়েছেন। কারখানা পরিচালক ও ব্যবস্থাপকরা বলছেন, সেমাইয়ের বাজারে করোনার
প্রভাব পড়েছে। করোনাকালিন সময়ের কারণে ভোক্তাদের চাহিদা কম থাকায় সেমাইয়ের
খুচরা এবং পাইকারী বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও কারানা লকডাউন আতঙ্ক
এবং শঙ্কা থাকায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা অন্যান্য বছরের মতো সেমাই মজুদ করছেন
না। যার কারণে খুচরা ও পাইকারী বাজারে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরবরাহ কম
থাকায় উৎপাদন করা যাচ্ছে না।কারখানা মালিকদের দাবি, গত ২/৩ বছরের
তুলনায় এবারের ঈদকে ঘিরে সেমাই উৎপাদনে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এর কারণ করোনা
মহামারীতে লকডাউর পরিস্থিতি, শ্রমিক সংকট, কাাঁচা মালের মূল্য বৃদ্ধি এবং
বাজারে চাহিদা কম থাকা।
তবে পাইকারী ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভোক্তাদের চাহিদা কম থাকায় বিক্রি কম হলেও বাজারে সেমাইয়ের দাম বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর সেমাই কারখানা মেসার্স
কুমিল্লা ফাওয়ার মিল, পানামা ফুড ও খন্দকার বেকারিসহ সব কয়টি কারখানায়
সেমাই উৎপাদনে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কেউ উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন, আবার কেউ
সামনের সপ্তাহের শুরুতে বন্ধ করে দিবেন।
তাদের একটাই কথা বাজারে চাহিদা নেই, সরবরাহ কমেছে ব্যাপক হারে।
সেমাই
উৎপাদনকারী কারখানা মেসার্স কুমিল্লা ফাওয়ার মিলের ব্যবস্থাপক সৈয়দ গোলাম
কাদের জানান, করোনাকালিন সময়ের কারণে গত ২/৩ বছরের তুলনায় এবার ঈদকে ঘিরে
সবচেয়ে কম উৎপাদন হয়েছে সেমাই। গত করোনা লকডাউনের সময়ও এমন হতাশাজনক
পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যা এখন মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
তিনি জানান, গত বছর
লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে দৈনিক ৭’শ কেজি সেমাই উৎপাদন করা হয়েছে। শবেবরাতের পর
থেকে ৩৫-৪০ দিনে প্রায় ২০/২৫ টন বাংলা ও লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন করে বাজারের
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের চাহিদা অনুযায়ী ৩০ টনের
লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শবেবরাতের পর থেকেই ঈদকে ঘিরে সেমাই তৈরি করতে শুরু
করেছি। রমজানের শুরুতে উৎপাদিত সেমাই সরবরাহ করতে গিয়ে দেখা যায় পাইকারী
ব্যবসায়ীদের আগ্রহ নেই বাজারে চাহিদা না থাকায়। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা
করে সেমাই উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ টনের মতো সেমাই
উৎপাদন করেছি। কিছু সেমাই পাইকারী বাজারে বিক্রি হয়েছে। এখন ওই ব্যবসায়ীরা
বলছেন ফেরত দেওয়া কথা।
সৈয়দ গোলাম কাদের জানান, তাদের মেসার্স কুমিল্লা
ফাওয়ার মিলের দুই ধরনের সেমাই উৎপাদন হয়ে থাকে। তার মধ্যে বাংলা (আল নূর)
সেমাই এবং লাচ্ছা (তানিন) সেমাই। বাংলা আল-নূর কেজিতে ৪০ টাকা এবং লাচ্ছা
তানিন ৮৫ টাকায় পাইকারী বিক্রি করেন।
একই কথা বলছেন কুমিল্লা বিসিক
শিল্পনগরীর সেমাই উৎপাদনকারী কারখানা পানামা ফুডের ব্যবস্থাপক মো. শাহ আলম।
তিনি জানান, উৎপাদনের তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পানামা ফুড সেমাই
উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। যা উৎপাদন করেছেন মজুদ সেই সেমাই সরবরাহ হচ্ছে
না।
এছাড়া বিসিকের আরেক বৃহৎ সেমাই উৎপাদনকারী কারখানা খন্দকার বেকারি।
এই কারখানার পরিচালক মো. ফিরোজ খন্দকার জানান, গত বছরের তুলনায় সেমাই
উৎপাদন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। ভোক্তা খাচ্ছে না। খুচরা ও পাইকারী বাজারে
সরবরাহ কম। সেই সাথে কাঁচা মালের মূল্য বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকট।
তিনি আরও
জানান, অন্যান্য বছরে বাজারে সেমাইয়ে চাহিদা থাকায় রমজানের ঈদকে ঘিরে
প্রতিদিন ১২-১৩’শ কেজি সেমাই উৎপাদন করেছেন। বাজারে সরবরাহ ছিল ব্যাপক।
পাইকারী ব্যবসায়ীরা কারখানায় এসে বসে থাকতেন। আর এই বছর দৈনিক ৩-৪’শ কেজি
সেমাই উৎপাদন করেও সরবরাহের শঙ্কায় রয়েছি।