Published : Friday, 30 April, 2021 at 12:00 AM, Update: 30.04.2021 2:03:48 AM
তানভীর
দিপু:
একদিকে জেলা প্রশাসনের অভিযান অন্যদিকে অবৈধ মাটি ব্যবসায়িদের
দৌরাত্ম- এ যেন চোর পুলিশ খেলা। কুমিল্লার গোমতী নদীর চর, তীর এবং বাঁধ
থেকে কোনভাবেই অবৈধ মাটি ব্যবসায়িদের সরানো যাচ্ছে না। দিনে অভিযান হলে,
রাতে চলে মাটি কাটা ও পরিবহন। আবার মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হলে
ভেকু, ড্রেজার, পাইপ কিংবা ট্রলার ফেলে পালায় ব্যবসায়িরা।
কুমিল্লায়
গোমতী নদী এবং বাঁধ থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের অপরাধে
৪দিনে ৩৭টি ড্রেজার ধ্বংস করেছে প্রশাসন। র মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার নদীর
টিক্কার চর ও কাপ্তানবাজার অংশে অভিযান চালিয়ে ১১ টি ড্রেজার ধ্বংস করা হয়।
নতুন জেলা প্রশাসক কুমিল্লায় যোগদানের পর থেকে গোমতীর তীর রক্ষায় গত দেড়
মাস যাবত চলছে অভিযান। ভেকু ও ড্রেজার সহ অর্ধশতাধিক যন্ত্রপাতিও ধ্বংস করা
হয়েছে এসময়। তবে করোনায় লকডাউন শুরুর পর মোবাইল কোর্টে ভাটা পড়ায় আবারো
তোড়জোর শুরু হয় মাটি খেকোদের। গোমতী নদী রক্ষায় দীর্ঘস্থায়ী কি ব্যবস্থা
নেয়ার কথা ভাবছে প্রশাসন এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ কামরুল
হাসান কুমিল্লার কাগজকে জানান, এ খেলা বন্ধ হচ্ছে শীঘ্রই। মোবাইল কোর্ট
চলমান থাকছেই। এছাড়া গোমতী ও ডাকাতিয়া নদী বাঁচাতে এই দুই নদীর তীরবর্তী
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে আলাদা কমিটি হবে। তারা তদন্ত করে বের
করবে এই অবৈধ কাজের পেছনে কারা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে কমিটি।
এরপর পুলিশ বাড়ি থেকে তাদের ধরে আনবে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, আমরা
সচেষ্ট। কুমিল্লাবাসীকেও সচেতন হতে হবে নিজের সম্পদ রক্ষায়। যে সব
জায়গাগুলো মাটি খেকোদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে সেখানে মাটি ব্যবসায়িদের
সাথে নিয়েই গাছ লাগিয়ে দিবো।
এর আগেও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল
হাসান জানান, হাউড্রো গ্রাফিক সার্ভে চালিয়ে দেখা হবে-গোমতীতে বালু
উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা আছে কি না। যদি পরীক্ষায় বালু না
পাওয়া যায় তবে গোমতীতে ইজারা বন্ধ করা হবে।
কুমিল্লায় গোমতী নদী এবং
বাঁধ থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের অপরাধে গত ৪দিনে ৩৭টি
ড্রেজার ধ্বংস করেছে প্রশাসন। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার নদীর টিক্কার চর ও
কাপ্তানবাজার অংশে অভিযান চালিয়ে ১১ টি ড্রেজার ধ্বংস করা হয়। জেলা পুলিশ,
ফায়ার সার্ভিস ও আনসার বাহিনীর সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী
ম্যাজিষ্ট্রেট জনি রায় ও মাহমুদুল হাসান রাসেল ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে
এসব ড্রেজার ও মাটি-বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়।
গোমতী নদীর
তীরে মাটিকাটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সাঈদ বলেন, দিনে ও রাতে
আমাদের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অনেক সময় আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে বালু
উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি মাটি কাটা শূণ্যের
কোটায় নামিয়ে আনা। একের পর এক অভিযান পরিচালনা করে যদি তাদের সরঞ্জামগুলো
নিয়মিত ধ্বংস করা যায় তাহলে এসব অবৈধ মাটি ব্যবসায়িদের মনোবল ভেঙে যাবে।
তিনি
আরো জানান, মূলত লোভী এবং অসাধু চক্র কাচা টাকার লোভে এই কার্যক্রম চালিয়ে
যাচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এগুলো আর ছাড় দেয়া হবে না।
কুমিল্লা
সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আ ক ম বাহউদ্দিন বাহার এ প্রসঙ্গে জানান,
আমরা চাই কুমিল্লা সড়রে গোমতী নদীর জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে দাউদকান্দি
পর্যন্ত কেউ যেন নদীর বাঁধ থেকে ড্রেজার বা ভেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন না করে।
নদী তীরের কোন কৃষি জমি যে কেউ নষ্ট না করে। পুরো গোমতী এলাকায় বিশেষ করে
‘আমার নির্বাচনী এলাকায়’ যেন গোমতীতে কোন ড্রেজার দেখতে না পাই। কারা এসব
ভেকু কিংবা ড্রেজার এনেছে তাদের বিরুদ্ধেও যেন প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়া
এব্যাপারে জেলা প্রশাসককে বলেছি।