Published : Saturday, 8 May, 2021 at 12:00 AM, Update: 08.05.2021 1:16:14 AM
রণবীর ঘোষ কিংকর: সবুজ পাতাকে ছাপিয়ে সোনালী রংয়ের ফুলে সজ্জিত গাছটির নাম সোনালু। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজিবতা নিয়ে গাছের প্রতিটি ডাল-পালায় থোকায় থোকায় অলংকারের ন্যায় শোভা পায় সোনালু ফুল। কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে গ্রীষ্মের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝড়া সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলছে দুল।
প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধণে সোনালু দারুন এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। দীর্ঘ মঞ্জুরীতে ঝুলে থাকা পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট্য সোনালু ফুলের থোকা অনেকটা অলংকারের মত। গ্রামের শিশু-কিশোরীরা এখনও ওই ফুল কানে দুল লাগিয়ে খেলায় মত্ত হয়।
সোনালু ফুলের আভায় শোভিত দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও। মহাসড়কটিকে ফোর লেনে রূপান্তরের পর সড়ক বিভাজনের (ডিভাইডার) উপরে লাগানো হয়েছে অনেক শোভা বর্ধণকারী ফুল গাছ।
গত ২ বছর যাবৎ ওইসব গাছগুলোতে ফুটতে শুরু করেছে নানা রকম ফুল। তবে গ্রীষ্মের এই সময়ে সোনালু ফুলের সোনাঝড়া রূপে মাতোয়ারা গাড়ি চালক-যাত্রী ও পথচারীরা। অনেক পথচারী ক্ষনিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য প্রাণ খুলে উপভোগ করতে দেখা গেছে।
মহাসড়কের চান্দিনা পালকি সিনেমা হল থেকে হাড়িখোলা পর্যন্ত ও আলেখারচর এলাকায় সারি সারি সোনালু গাছে ফুটেছে হলুদ ফুল। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাসড়কের চান্দিনার বেলাশহর এলাকায় প্রাইভেটকার থামিয়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা গেছে দুই যুবক রাকিব ও তামিম কে। তারা প্রাইভেটকার যোগে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন।
বাংলাদেশের সিংহভাগ সোনালু গাছ জন্মায় প্রাকৃতিক ভাবে। প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুনাবলি সম্পন্ন এই গাছটি বেশির ভাগই বেড়ে উঠছে অযতœ-অবহেলায়। রোপনের সংখ্যা একেবারেই কম। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফোরলেন বিভাজনের উপর রোপন করা হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে। আর এতেই পিচঢালা কালো উত্তপ্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান সোনালী বর্ণে সেজেছে।
সোনালু ফুলের শোভায় মুগ্ধ হয়ে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক জাকির হোসেনও লিখেছেন কবিতা-
বসুন্ধরায় বৃক্ষ রাজী,
সবুজই তার প্রকৃতি,
সবুজ পত্রে সোনালু ফুল
কিশোরীর কানের দুল।
তথ্য নিয়ে জানা যায়- সোনালু গাছের পাতা ও বাকল ভষজগুন সমৃদ্ধ। যা ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এ গাছ জন্মে বেশি। সোনালু গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কেসিও ফেস্টুলা এবং প্রকৃত শুদ্ধ নাম কর্ণিকার। ইংরেজীতে এর নাম গোল্ডের শোয়ার। তবে বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে নামেও রয়েছে ভিন্নতা।
কুমিল্লার পর্যটন এলাকা শালবনসহ জেলা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য সোনালু গাছ। সড়ক-মহাসড়কসহ গ্রামাঞ্চলের মেঠো পথে, বাগানে স্বর্ণচূড়ার ন্যায় সোনালী অলংকারে সৌন্দর্য বিলিয়ে নিশ্চুপ ভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে গ্রাষ্মীর প্রকৃতি রাঙ্গানো সোনালু।
তবে এক সময় সোনালু গাছ কুমিল্লার প্রকৃতিতে অনেক বেশি থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। সোনালু গাছের কাঠ তেমন গুরুত্ব বহন না করায় এবং গাছটি খুব ধীর গতিতে বেড়ে উঠায় এই গাছ রোপনে আগ্রহ নেই কারও। প্রকৃতিকে সাজাতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান পরিবেশবিদরা।