বাড়ি ফিরতে পাচঁগুণ বেশি ভাড়া গুনছেন যাত্রীরা!
Published : Saturday, 8 May, 2021 at 12:00 AM
লকডাউনের
মধ্যে ঈদে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ
থাকায় চারগুণ থকে পাঁচগুণ বেশি ভাড়া গুনে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার বা ছোট
ছোট লেগুনা দিয়ে বাড়ি ফিরছেন সাধারণ যাত্রীরা। এসব যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি
না মেনে গাদাগাদি করে ফিরছেন তারা। আর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এসব দেখেও না
দেখার ভান করছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে
দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের কাউন্টারের লোকজন প্রতি গাড়ি থেকে ৫০০ টাকা
থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিয়ে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করে
দিচ্ছে।
শুক্রবার (৭ মে) সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও শিরাইল মোড় ও কাচঁপুর বাসস্ট্যান্ডে ঈদে ঘরমুখো
মানুষের ভিড় দেখা যায়। যাত্রীরা কুমিল্লা, চাদঁপুর, গৌরীপুর, দাউদকান্দিসহ
বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপো করছেন। এ সময় দেখা যায় সাইনবোর্ড এলাকায়
সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও লেগুনা। এসব যানবাহনে
চার-পাঁচগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। যাত্রীদের
অভিযোগ, আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে নিজ
নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।
কুমিল্লা যাওয়ার জন্য সাইনবোর্ড এলাকায় স্ত্রী ও
সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে গাড়ি জন্য অপো করছিলেন মামুনুর রহমান। তিনি বলেন,
ছেলেমেয়েদের আবদার রার জন্য ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা যাচ্ছি। গ্রামে
মা-বাবা রয়েছেন। অনেক দিন তাদের সঙ্গে দেখা হয় না। তাই একদিকে ছেলেমেয়েদের
আবদার রা, অন্যদিকে বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে বাড়ি
যাচ্ছি। কিন্তু আন্তজেলা পরিবহন বন্ধ থাকায় জনপ্রতি ২০০ টাকার ভাড়া এখন ৫০০
টাকা দিয়ে মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে
গণপরিবহন চালু থাকলে এই অবস্থা হতো না।
অপর যাত্রী আনোয়ার হোসেন জানান,
গণপরিবহন বন্ধ। কিন্তু জরুরি কাজে বাড়ি যেতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি
ভাড়া দিয়েই মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছি। কিন্তু মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহনে
স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। প্রতি সিটে চার জন করে যাত্রী তোলা হচ্ছে।
তাই গাদাগাদি করেই গন্তব্যে যাচ্ছি। এসব দেখার জন্য প্রশাসনের কোনও তদারকিও
নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত দূরপাল্লার বাস
কাউন্টারের স্টাফরা স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে মাইক্রোবাসে
যাত্রী তুলে দিচ্ছেন। কুমিল্লায় যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে চারশ' টাকা,
চাঁদপুরে পাঁচশ' থেকে ছয়শ' টাকা, দাউদকান্দির জন্য নেওয়া হচ্ছে দুই থেকে
আড়াইশ' টাকা, গৌরীপুরের জন্য তিনশ' থেকে সাড়ে তিনশ' টাকা।
চাঁদপুরগামী
মাইক্রোবাসের চালক নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতি গাড়িতে যাত্রী তোলা হলেই
গুনতে হচ্ছে পাঁচশ' থেকে এক হাজার টাকা। স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশ ও
দূরপাল্লার কাউন্টারের স্টাফরা এই টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। কেউ টাকা
দিতে না চাইলে ওই গাড়িতে যাত্রী উঠাতে দিচ্ছেন না তারা। তাই বাধ্য হয়ে
চাঁদা দিয়ে যাত্রী তোলা ও পরিবহন হচ্ছে।
তবে যারা চাঁদা আদায় করছেন, নাম
প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন বলেন, এত বেশি টাকা নয়। প্রতি গাড়ি থেকে
৫০ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আমরা পরিশ্রম করে যাত্রী ডেকে গাড়িতে
তুলে দিচ্ছি। তাই চালক খুশি হয়ে আমাদের এই টাকা দিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের এএসপির সরকারি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়েও এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।