সরকারের
আরোপ করা বিধি-নিষেধ ঘরমুখো মানুষের স্রোত ঠেকাতে পারেনি। বছরে দুটি ঈদ
মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় উৎসব। যে যেখানেই থাকুক না কেন, দুটি ঈদে অন্তত
তারা নিজ নিজ পরিবার ও স্বজনদের কাছে ফিরে যায়। দেশে চলমান লকডাউনের মধ্যে
দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই কয়েক লাখ
মানুষ যে যেভাবে পেরেছে গ্রামের বাড়ি গেছে। ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে
ভ্রমণ করতে হয়েছে। ফেরিতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই
ছিল না কোথাও। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে ভ্রমণ, বিভিন্ন বিপণিবিতানে
মানুষের ভিড়ের কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
সংখ্যায় কম হলেও ঈদ উদযাপন শেষে গত শনিবার থেকে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে
মানুষ। ঈদ-পরবর্তীকালে শহরমুখী জনস্রোত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশে
গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রথম মৃত্যুর খবর
আসে ওই বছরের ১৮ মার্চ। শনিবার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে
সাত লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৬ জন। এই রোগে মারা গেছে ১২ হাজার ১২৪ জন মানুষ। গত
বছরের নভেম্বরের পর থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও এ বছরের ১৪
ফেব্রুয়ারি থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। এপ্রিল মাসজুড়ে শনাক্ত এবং
মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে। এর সঙ্গে বাড়তি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে
করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বা রূপান্তরিত ধরন। এরই মধ্যে দেশে ভারতীয়
ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এই ভেরিয়েন্টটি ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামলানো
মুশকিল হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সংক্রমণের দ্বিতীয়
ঢেউ সামাল দিতে গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সরকার ঘোষিত ‘লকডাউন’ কাজে
দিয়েছে। এখন সংক্রমণ অনেকটাই কমে আসতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বিধি-নিষেধের
মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। বিধি-নিষেধের আগের
শর্তগুলোই বহাল থাকছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা দীর্ঘদিন লকডাউন চালানো
সম্ভব নয়। সে েেত্র স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং রোগী শনাক্ত করে
আইসোলেশন, রোগীর সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং সীমান্ত এলাকায়
কড়াকড়ি নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থাই নিচ্ছে। সাধারণ
মানুষকেও এখন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।