ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি'র অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদে বলেছেন, বড় আকৃতির কৌশলগত ড্রোন গাজা উন্মোচনের মধ্যদিয়ে দেশের ড্রোন শক্তি আরও অনেক বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এই ড্রোন একটানা ৩৫ ঘণ্টা আকাশে উড়তে পারবে। ৩৫ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে ৫০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যবস্তু পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি আঘাত হানতে পারবে। গাজা ড্রোন একসঙ্গে ১৩টি বোমা বহন করতে পারে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই ড্রোনের কয়েক পরীক্ষা সম্পন্ন করে তা সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
গাজায় ইসলামী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের শর্ত মেনে দখলদার ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ করার দিনই ইরান গাজা নামের এই ড্রোন উন্মোচন করল। ইরান প্রথম থেকেই ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে।
ইরানের এ ড্রোন ইসরাইলের কাছে নতুন আতংক হয়ে দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করছেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ ব্যাপারে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদলু এজেন্সির চিফ রিপোর্টার ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সরোয়ার আলম বলেন, এই অঞ্চলে বা মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক দিক থেকে ইসরাইলের ওপরে আক্রমণ করতে পারবে, অর্থাৎ যুদ্ধ করতে পারবে এরকম একটি মাত্রই দেশ আছে, সেটা হচ্ছে ইরান।
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের প্রচুর অস্ত্র আছে আরব আমিরাতের, মিশরের, কাতারের প্রচুর অস্ত্র আছে যা নিয়ে একত্রে ঝাঁপিয়ে পড়লে ইসরাইল ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই আরব দেশগুলোর সব অস্ত্রই অন্যদের কাছ থেকে কেনা। তাদের অনুমতি ছাড়া এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। আর এগুলো এমন সব দেশ থেকে কেনা যারা, সিরিয়াতে, ইয়েমেনে, লিবিয়ায়, এই অস্ত্রগুলো দিয়ে আক্রমণ করার অনুমতি দিবে ঠিকই, কিন্তু ইসরাইলের দিকে গুলি করা তো দূরের কথা ওই দেশটির দিকে তাক করতেও দেবে না। সুতরাং এই অঞ্চলে ইরানই হচ্ছে একমাত্র রাষ্ট্র যার অস্ত্রের সিংহভাগ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। তাই সে যখন যার বিরুদ্ধে ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারে। তবে ইরান এগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’
ইসরাইলের কাছে তুরস্কের চেয়ে কেন ইরানকে নিয়ে বেশি মাথাব্যাথা এ ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সরোয়ার আলম বলেন, তুরস্কের নেতৃত্বের ইচ্ছা আছে, জনগণের সাপোর্ট আছে, সেনাবাহিনীর সমর্থন আছে। কিন্তু তুরস্কের সামরিক সামর্থ এককভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট না। কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি দেশের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান চালানোর জন্য যে পরিমাণ ভারি অস্ত্র-শস্ত্র দরকার সে তুলনায় তুরস্কের নিজস্ব তৈরি অস্ত্রের পরিমাণ খুবই কম। যেমন তুরস্ক থেকে সরাসরি ইসরাইলে আক্রমণ করতে হলে শুধুমাত্র বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনী ব্যবহার করতে হবে। অথচ তুরস্কের এই দুটি বাহিনীকেই বছরের পর বছর দুর্বল করে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, তুরস্কের যুদ্ধ বিমানগুলোর প্রায় সবই আমেরিকা থেকে কেনা। তুরস্কের কোন বিমানবাহী রণতরী নেই যা দিয়ে ভূমধ্যসাগরে ফিলিস্তিনের তীরে তার সামরিক উপস্থিতির জানান দিবে। তুরস্ক থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে ইসরাইলে বিমান হামলা চালানো খুব সহজ একটি কাজ না।