ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দুই যুগ পর বাড়ি ফিরলেন নিরুদ্দেশ দুলাল
Published : Monday, 24 May, 2021 at 12:00 AM
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট দুলাল মিয়া। ১৯৯৮ সালের দিকে তিনি নিরুদ্দেশ হন। তার পথ চেয়ে অপেক্ষা করতে করতে মারা যান মা। ভাই-বোনও দুলাল মিয়ার জীবিত ফিরে আসার স্বপ্নের ইতি টানেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পোস্ট দুলাল মিয়াকে দুই যুগ পর ফিরিয়ে এনেছে তার স্বজনদের কাছে।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী দুলাল মিয়া রোববার (২৩ মে) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার নোয়াগাঁও থেকে তার স্বজনদের সহায়তায় ফিরে আসেন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার উজিলাব গ্রামের বাড়িতে। এতেই খুশি তার এলাকার লোকজন ও প্রতিবেশীরা।
দুলাল মিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্মের পর স্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে উঠলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজনের কাছে তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধকতা ধরা পড়ে। অভাব ও দারিদ্র্যতার সঙ্গে যুদ্ধ করা কৃষক পরিবারটি দুলালের যতেœর কমতি করেনি। এক সময় তার বাবা খালেক মিয়াও মারা যান।
দুলাল মিয়ার বয়স যখন ২২ বছর, তখন তিনি কাজ নেন শ্রীপুর সদরের নুরুল ইসলামের হোটেলে। প্রতিদিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আসলেও ১৯৯৮ সালের একদিন তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। এদিক-ওদিক খোঁজ করলেও মেলেনি তার সন্ধান।
দুলাল মিয়ার মামাতো ভাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী আমিরুজ্জামান বলেন, ‘পরিবারের সবাই অনেক খোঁজ করে তাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশাও বাদ দেন। শনিবার (২২ মে) দুলাল মিয়ার ছবিসহ তাকে নিয়ে একটি পোস্ট ফেসবুকে স্বাস্থ্য সহকারীদের গ্রুপে দেখা যায়। সেখানে একনজর দেখাতেই দুলালকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। পরে যোগাযোগ করে রোববার ভোরেই তারা চলে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার নোয়াগাঁও গ্রামের লোকজন দুলালকে উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখে আশ্রয় দেয়। কয়েক বছরে সে এলাকার সবার পরিচিত হয়ে ওঠে। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য ফজলুল হক মেম্বারের বাড়িতেই সে রাত যাপন করত। সে কথা বলতে পারত না। হঠাৎ কয়েক দিন আগে কথা বলা শুরু করে সে। এ সময় নিজের নাম ও তার বাড়ি শ্রীপুর বলতে থাকে। তবে কীভাবে সেখানে গিয়েছিল সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি।’
এদিকে দুলাল মিয়া তার বাড়িতে ফিরে যাবেন, সে খবরে সকাল থেকেই এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে তাকে বিদায় জানান।
দুলাল মিয়ার বড় ভাই আবুল হোসেন বলেন, ‘তার প্রতীক্ষায় থেকে আমাদের মা মারা গেছেন। আজ মা থাকলে হারানো সন্তান বুকে পেয়ে খুব খুশি হতেন।’
ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তার ভাই যেন আর কোথাও চলে না যায়, সেজন্য তিনি তার ভাইকে দেখে রাখবেন বলে জানান।
এদিকে দুলাল মিয়া হঠাৎ স্বজনদের পেয়ে ভাবলেশহীন হয়ে পড়ায় তিনি কিছু বলতে পারেননি।