অঙ্কের হিসাবে দৈনিক ক্যালরি খরচের পরিমাণ সহজেই বের করা যায়।
তবে ক্যালরি ঝরিয়ে আপনি শরীরকে কোন পর্যায়ে নিতে চান তা যদি জানা না থাকে তবে কোনো কিছুই অর্জন করা আসলে সম্ভব নয়।
ওজন কমাতে চাইলে ক্যালরি ঝরানোর হিসাব একরকম, আবার বাড়াতে চাইলেও ক্যালরি ঝরানোর মাত্রা ভিন্ন।
কতটুকু ঝরাবেন তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কতটুকু গ্রহণ করবেন সেই হিসাবটাও।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ওজন কমাতে হলে দিনে যতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করবেন তার চাইতে বেশি খরচ করতে হবে। এর বিপরীতটা হলে ওজন বাড়বে।
বলা সহজ তবে করা কঠিন। শুধু ক্যালরি গ্রহণ আর খরচের হিসাব কষে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
কী খাচ্ছেন, কতটুকু পুষ্টি পাচ্ছেন, খাবারের মান কেমন এমন অনেক বিষয় এখানে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সঙ্গে আছে ঘুমের অভ্যাস, মানসিক চাপ, হরমোন, শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদির প্রভাব।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাল্যান্স ওয়ান সাপ্লিমেন্টস’য়ের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ট্রিস্টা বেস্ট বলেন, “প্রতিটি মানুষের বিপাক ক্রিয়ার ধরনে ভিন্নতা থাকে। একজন মানুষ দৈনিক কতটা ক্যালরি খরচ করবে তা এই বিপাকক্রিয়াই নিয়ন্ত্রণ করে। ডাক্তারি ভাষায় আমরা একে বলি ‘বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর)। এর মান থেকে জানা যায় একজন মানুষের প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শরীরের দৈনন্দিন কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি হিসাব করার একটি পদ্ধতি হলো ‘হ্যারিস-বেনেডিক্ট ফর্মুলা’। এই হিসেবটাই আমরা করতে পারি।”
“প্রথমে লিঙ্গভেদে হিসেব করা যাক।”
একজন নারীর ‘বিএমআর’য়ের মাত্রা বের করার সূত্র:
৬৫৫+(৪.৩৫ x পাউন্ডে শারীরিক ওজন)+(৪.৭ x ইঞ্চিতে উচ্চতা) – (৪.৭ x বয়স)।
পুরুষের জন্য সুত্র:
৬৬ + (৬.২ x পাউন্ডে শারীরিক ওজন) + (১২.৭ x ইঞ্চিতে উচ্চতা) – (৬.৮ x বয়স)।
“একজন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা, ৪০ বছর বয়স আর ১৬০ পাউন্ড ওজনের নারীকে উদাহরণ হিসেবে ধরলে সূত্র অনুযায়ী তার ‘বিএমআর’য়ের মান হয় ১৪৮৩।”
এবার হিসাবে আনা যাক শারীরিক পরিশ্রমের দিকটা।
একজন মানুষ তার বর্তমান ওজনে স্থির থাকতে চাইলে দৈনিক কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে তা বের করতে চাইলে তার শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা হিসাব করতে হবে।
সেই হিসাবটা করতে হলে যারা মোটেই ব্যায়াম করেন না বা মৃদুমাত্রায় কালেভদ্রে করেন তাদের ‘বিএমআর’য়ের মাত্রাকে গুন দিতে হবে ১.২ দিয়ে।
সপ্তাহে এক থেকে তিন দিন হালকা ব্যায়াম যারা করেন তাদের ‘বিএমআর’ গুন দিতে হবে ১.৩৭৫ দিয়ে।
সপ্তাহের তিন থেকে পাঁচ দিন মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করলে গুন দিতে হবে ১.৫৫ দিয়ে।
সপ্তাহের ছয় থেকে সাত দিন ভারি ব্যায়াম করলে বিএমআর’য়ের সঙ্গে গুন হবে ১.৭২৫।
আর প্রতিদিন দুবার প্রচণ্ড ভারি ব্যায়াম যারা করেন তাদের ‘বিএমআর’য়ের মানের সঙ্গে গুন করতে হবে ১.৯।
এখন উপরে যে নারীর উদাহরণ দেওয়া হয়েছিল, সে যদি প্রতি সপ্তাহে টুকটাক ব্যায়াম করেন তবে এই সমীকরণ অনুযায়ী তার ‘বিএমআর’কে ১.৩৭৫ দিয়ে গুন দেওয়ার ফলাফল দাঁড়ায় ২০৩৯।
অর্থাৎ এই পরিমাণ ক্যালরি তাকে প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে তার বর্তমান ওজন ধরে রাখার জন্য।
ক্যালরি ঘাটতির সঠিক মাত্রা
লন্ডনের ‘ফিটনেস ল্যাব’য়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যায়াম প্রশিক্ষক জ্যাক কক্সাল বলেন, “কেউ যদি ওজন কমাতে চায় তবে তাকে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ যতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করেছেন তার চাইতে বেশি ক্যালরি খরচ করতে হবে। আর যতদিন না কাঙ্ক্ষিত ওজন অর্জন হচ্ছে ততদিন সেই ঘাটতি বজায় রাখতে হবে।”
“প্রাথমিক অবস্থায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ঘাটতি বজায় রাখাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
সেই ৪০ বছর বয়সি নারীর উদাহরণ যদি আবার টানা হয়, তবে ২০ শতাংশ ক্যালরি ঘাটতি মানে প্রায় ৪০০ ক্যালরি। অর্থাৎ প্রতিদিন ১,৬০০ ক্যালরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
ওজন কমানোর জন্য ক্যালরি নিয়ন্ত্রণের উপায় হল ক্যালরি গ্রহণ কমানো অথবা শরীরচর্চা বাড়ানো অথবা দুটোর মিশ্রণ।
শরীরের প্রয়োজন বোঝা
কক্সাল বলেন, “মানুষ ওজন কমাতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার বা মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করেও আশানুরুপ ফল না পাওয়ার প্রধান কারণ হল, শুরুতেই তাদের ক্যালরির হিসাবে গন্ডগোল থেকে যায়।”
“ক্যালরির এই হিসাব আসলে একটা ধারণা মাত্র, শরীরের ক্যালরির চাহিদা নির্ভুলভাবে বের করা এভাবে সম্ভব নয়। শুরু করার জন্য হিসাবটা ভালো তবে পরে তাতে পরিবর্তন আনতে হতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রের এনাজিং ড্রিংক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘স্যাশে ইনফিউশনন’য়ের ডা. ওয়াকাস আহমেদ বাত্তার বলেন, “হুট করে খাওয়া অনেক কমিয়ে দেওয়া প্রাথমিকভাবে খুব ভালো ফল দিলেও তা বদলেও যায় একই গতিতে। একসময় খাবারের ঘাটতি এতো তীব্রভাবে অনুভূত হয় যে সব ছেড়ে দিতে মন চায়। তাই ধীরে কমানো উচিত।”
“প্রথমে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা ১০ শতাংশ কমান, একটু অভ্যস্ত হয়ে ধীরে ধীরে আরও কমান।”
ক্যালরি গোনা শুরুর দিকে ভালো পদ্ধতি হলেও ওজন কমানো লম্বা যাত্রায় নজর রাখা উচিত নিজের কোমরের পরিধির দিকে।
পুরানো কাপড়গুলো কি ঢিল কিংবা আঁটসাঁট হচ্ছে? ঘুম কেমন হচ্ছে আপনার? কাজে কি আগের চাইতে বেশি উদ্যম টের পাচ্ছেন? মনযোগ বেড়েছে?
ক্যালরি কতটুকু গেল আর কতটুকু এল তার চাইতে এই প্রশ্নগুলো উত্তর খোঁজা বেশি জরুরি।