চীনা টিকার দাম পড়বে প্রতি ডোজ ১০ ডলার
Published : Friday, 28 May, 2021 at 12:00 AM
নিজস্ব প্রতিবেদক: চীনের সিনোফার্ম থেকে প্রতি ডোজ ১০ ডলার দরে দেড় কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চীন থেকে সরকারি পর্যায়ে সরাসরি ওই টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহিদা আক্তার বলেন, “জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকাদান অব্যাহত রাখতে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোফার্ম থেকে গণচীনের তৈরি সার্স কোভ-২ ভ্যাকসিন কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, দেড় কোটি ডোজ টিকার মোট দাম পড়বে ১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ হয় এক হাজার ২৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১০ ডলার পড়বে।
সিনোফার্ম প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে জুন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে বাংলাদেশকে এক কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করবে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব শাহিদা বলেন, “এই কেনাকাটায় আমাদের দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। সরাসরি চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের এই ক্রয় চুক্তি হচ্ছে।”
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড কিনে এতদিন টিকাদান চালিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। সব খরচ মিলিয়ে ওই টিকার দাম পড়েছে ৫ ডলার।
এই হিসাবে চীন থেকে টিকা কিনতে বাংলাদেশকে এখন প্রতি ডোজে দ্বিগুণ টাকা গুণতে হচ্ছে।
এতদিন বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছিল শুধু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড।
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশের কেনা ৩ কোটি ডোজ টিকা জুনের মধ্যে সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ হাতে পেয়েছে। ফলে টিকাদান কর্মূচি চালিয়ে নিতে এখন নতুন উৎস থেকে টিকা আনতে হচ্ছে সরকারকে।
এর অংশ হিসেবে সিনোমফার্মের বিবিআইবিপি-করভি (ইইওইচ-ঈড়ৎঠ) এবং রাশিয়ার তৈরি স্পুৎনিক-ভি টিকা বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় এপ্রিলের শেষে এবং মে মাসের শুরুতে।
গত ১২ মে সিনোফার্মের টিকার ৫ লাখ ডোজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়, যা চীন সরকার উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা চীন উপহার হিসেবে দেবে বলে জানিয়েছে।
চীন থেকে আসা প্রথম চালানের টিকা ঢাকার চার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দেওয়া শুরু হয়েছে গত ২৫ মে। দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদেরও এই টিকা দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
কোভিশিল্ডের মত সিনোফার্মের টিকাও নিতে হবে দুই ডোজ করে। উৎপাদকদের ভাষ্য, পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাদের টিকা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ কার্যকরিতা দেখিয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ আইনের আওতায় ভোলায় দুটি অনুসন্ধান কূপ এবং একটি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ খননের লক্ষ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোম্পানি গ্যাসপ্রমের সঙ্গে বাপেক্সের চুক্তির অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
টার্ন-কি পদ্ধতিতে ৬৪৮ কোটি ৩৯ লাখ ১১ হাজার ৮৫০ টাকায় কূপ তিনটি খনন করে দেবে গ্যাসপ্রম।
এছাড়া ‘গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের পিএস ওয়ান প্যাকেজের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসিআই ইন্টারন্যাশনাল ও সুইডিশ ন্যাশনাল রোড কনসালল্টিং, বাংলাদেশের এসিই কনসাল্টস ও বিসিএল অ্যাসোসিয়েটসের জয়েন্ট ভেঞ্চার।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৯২ লাখ ৩ হাজার ৫৯৩ টাকা।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য ৬৫৮ কোটি ৪০ লাখ ৩২ হাজার টাকায় কমিউনিকেশন, নেভিগেশন অ্যান্ড সার্ভেইলেন্স- এয়ার ট্রাফিক সিস্টেম (সিএনএস-এটিএম) কেনার একটি প্রস্তাবও এদিন অনুমাদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। ফ্রান্সের তালিস এলিনিয়ার থেকে জিটুজি ভিত্তিতে এসব সরঞ্জাম কিনবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীতীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় ৬.৩ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ এবং ১৪ দশমিক ৭৫০ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ খুলনা শিপইয়ার্ডের মাধ্যমে ৩৬৭ কোটি ২৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯৫০ টাকায় করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সরকারি ক্রয়ের কাজে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরও বেশি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছিল বৈঠকে।
ক্রয় কমিটি এ বিষয়ে আগে একটি মূল্যায়ন কমিটি করে দিয়েছিল। ক্রয় কাজে অধিকতর প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য পিপিএ এবং পিপিআর এর কোথায় সংশোধন আনা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ করেছিল কমিটি। সেই সুপারিশগুলোও এদিন বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
বিষয়গুলো আরও পর্যালোচনার জন্য অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে এদিন। আইএমইডি, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বিভাগ, এলজিইডিসহ আরও কয়েকটি বিভাগের প্রতিনিধিকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “যখন কোনো ক্রয় প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়, তখন দামের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হ্রাস বা বৃদ্ধির সুযোগ আমাদের রয়েছে। এখন আমরা মনে করি, বিষয়টি আরও আপডেট করা দরকার। কারণ ১০% প্লাস-মাইনাস করলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থাকে না। সবাই একই প্রাইস সাবমিট করে।
“এটার ভালো দিকও আছে আবার খারাপ দিকও আছে। এটা তুলে দিলে কেউ ৯০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি প্রাইস উঠানামা করতে পারবে। এ বিষয়টি দেখতে আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি। তারা আলাপ আলোচনা করবেন।”