স্টাফ
রিপোর্টারঃ আইডিয়েল কো-অপারেটিভ লিমিটেড (আইসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক
এইচএনএম শফিকুর রহমান ও তার স্ত্রী শামছুন্নাহার মিনাকে গ্রেফতার করেছে
র্যাব-৪, রাজধানীর বাংলামটর বাসা থেকে বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান
চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, আইসিএল শফিকের বিরুদ্ধে
অর্থ আতœসাৎ, প্রতারনা ও অপহরনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শফিক রহমানের
বিরুদ্ধে একাধিক মামলার ওয়ারেন্ট ও সাজা রয়েছে। তিনি অধিক মুনাফার লোভ
দেখিয়ে সাধারন মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, গ্রাহকদের টাকাসহ লভ্যাংশ ফেরত
চাইতে গেলে হুমকি দামকিসহ অপহরন করতেন। আগেও আমানত গ্রাহকের মামলায় তিনি ও
তার স্ত্রী আটক হয়েছিলেন বলে র্যাব জানায়। গ্রাহকদের অর্থ আতœসাতের
অভিযোগে শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার সাজা রয়েছে তাছাড়া প্রায়
২৫টি মামলার ওয়ারেন্ট ভূক্ত আসামী তিনি। তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের শতাধিক
মামলা রয়েছে।
কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়, পদুয়ারবাজার এলাকাসহ
চৌদ্দগ্রামে ৬টি শাখা অফিস খুলে দ্বিগুণ মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় এক লাখ
গ্রাহকের কাছ থেকে হজ আমানত, ডিপিএস, মাসিক মুনাফা, দ্বিগুণ বৃদ্ধি আমানত,
আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসায়িক, দেনমোহর আমানত এবং লাখপতি ও কোটিপতি
ডিপোজিট স্কিম প্রকল্পের নামে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু
থেকে মাত্র তিন বছরে রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনের প্রধান অফিসসহ কুমিল্লা ও
দেশের অন্যান্য জায়গার ৩৬টি শাখা অফিসের মাধ্যমে কয়েক লাখ গ্রাহকের ৮হাজার
কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তারমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের একটি বড় অংশ
কুমিল্লার।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে আইসিএল বন্ধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে
পালিয়ে যাওয়ায় কুমিল্লার বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
শফিকুর রহমান ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চেক জালিয়াতি এবং অর্থ
আত্মসাতের মামলা করে। অন্যদিকে দুদকও অনুসন্ধান এবং তদন্তে নামে।
এদিকে
সমন্বয়ের নামেও শফিকুর প্রতারনা করেছেন। আইসিএল শফিক নিজের এলাকার বিভিন্ন
মানুষের মামলা থেকে রক্ষা পেতে তার আশে পাশের কিছু গ্রাহকদের টাকার
পরিবর্তে জমি দিবেন বলে সমন্বয়নের নামে প্রতারনা করেছেন বলে জানান
ভূক্তভোগিরা। সে ১ লক্ষ টাকার মূল্যও জমি ১০ লক্ষ টাকা দাম ধরে কিছু
মানুষকে দেয়। আবার অনেককে জমি দিবে বলে কাগজপ্রত্র নিয়ে আর জমি দেয় না।
অনেক গ্রাহকের মামলা ঢাকার হাইকোটে নিয়ে স্থগিত করে রাখে। এভাবে নানা কৌশলে
সমন্বয়ের নামে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করেন।
প্রতারনার শিকার আইসিএল
গ্রাহকদের সমন্বয় পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে তাদের অর্থ ফেরত পেতে চেষ্ঠা চালিয়ে
যাচ্ছেন। কুমিল্লায় আইসিএলের প্রতারনার শিকার হাজার হাজার গ্রাহক তাদের
টাকা ফেরতের দাবীতে সমন্বয় পরিষদ গঠন করে বিভিন্ন আন্দোলন সভা মানববন্ধন
করে সরকারের দৃষ্টি আর্কষন করছেন। কুমিল্লা নগরীর টাউন হল সম্মেলন কক্ষে
ভূক্তভোগী গ্রাহক ফোরাম আইসিএল এর আয়োজনে সভায় কুমিল্লা সম্পাদক পরিষদের
সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক বিবর্তন সম্পাদক অধ্যাপক দীলিপ মজুমদার শফিকের
বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার দ্রুত বিচার করে আইনের আওতায় এনে গ্রাহকের টাকা
ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
আইসিএল
গ্রুপের গ্রাহক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ময়নামতি এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান ও
সদস্য সচিব কাপ্তানবাজারের আজমির হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা
পরিচালক শফিকুর রহমান কুমিল্লার লাখো লোকের সঙ্গে প্রতারণা করে কমপক্ষে
দুইশো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে
শফিকুর রহমানের সহযোগীদের মধ্যে তার স্ত্রী কাজী শামসুন নাহার মীনা, শ্যালক
কাজী ফখরুল ইসলাম, ভাগ্নে শেখ আহাম্মেদ জড়িত ছিল। শফিকের কারণে কুমিল্লার
কয়েক হাজার পরিবার আজ নি:স্ব। আইসিএলে বিনিয়োগ করা কুমিল্লার সকল গ্রাহক
ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শফিকের বিনিয়োগের অর্থ
ফেরতের দাবী জানান।