Published : Saturday, 29 May, 2021 at 12:00 AM, Update: 29.05.2021 1:33:11 AM
ডা. আতাউর রহমান জসিম:
কুমিল্লার প্রবীন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এমএস আলম স্যার শুক্রবার সকাল ৭ টায় বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিওন)। কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষের কাছে সম্মানিত একজন মানবিক চিকিৎসক ছিলেন ডা. আলম স্যার। তিনি ছিলেন কুমিল্লার প্রবীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। চট্টগ্রামের সন্তান হলেও সরকারি চাকুরির জন্য কুমিল্লায় এসে সরকারি চাকুরি শেষ করে কুমিল্লার মানুষের সম্মান ও ভালোবাসায় নিজেকে থিতু করেন কুমিল্লাতে। কুমিল্লার সকলের কাছে ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত। চিকিৎসক হিসেবে সর্বোচ্চ উজাড় করে মানুষকে ভালোবেসে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে কুমিল্লাবাসীর মনে স্থান করে নিয়েছিলেন আমাদের অতি আপনজন ও বিপদের সাথী হিসেবে। কুমিল্লাতেই ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, এই জনপদের মানুষের পাশেই থেকেছেন আমৃত্যু। কুমিল্লার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পাশাপাশি কুমিল্লার চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বজন ছিলেন।
তিনি ছিলেন বিনয়ী, ও মার্জিত। চলনে বলনে ছিলেন অসম্ভব স্মার্ট,আপাদমস্তক আধুনিক ও ভদ্র। তার অগাধ স্নেহ ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি বরাবর। টেলিফোনে মাঝে মধ্যে খোঁজ খবর নিলে খুব খুশি হতেন, আমার স্ত্রী-সন্তান বিশেষ করে আমার শ্বশুরের সাথে উনার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ধরতেন! এমন সজ্জন, অমায়িক, মানবিক ও আলোকিত মানুষ বর্তমান সমাজে বিরল। কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন স্যারের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত থাকার আক্ষেপ আমাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
তিনি ছিলেন সারাজীবন জ্ঞান পিপাসু। কমিল্লা বিএমএ র যে কোন বৈজ্ঞানিক সেমিনারে স্যার সবার আগে উপস্থিত হতেন, প্রশ্ন করতেন, উত্তর দিতেন, যে কোন বিষয়ে কথা বলতে পারতেন। মেডিকেল সায়েন্সের বাইরেও ইতিহাস, সংস্কৃতি বিশেষ করে ইসলামের ইতিহাসে উনার ছিল ঈর্ষনীয় পান্ডিত্য। একজন সার্থক চিকিৎসকের পাশাপাশি পারিবারিক জীবনেও ছিলেন সফল। তাঁর ছেলেমেয়েরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত ও নিজ-নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত।
কুমিল্লা বিএমএ র সায়েন্টফিক কমিটির দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন, সমানতালে কাজ করেছিলেন প্রকাশনা কমিটিতে। যার ফলে কুমিল্লা বিএমএ র সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সি এম ই প্রোগ্রামগুলো নিয়মিত অনুষ্ঠিত হতো ও বিএমএ জার্নালটি ছিল রিকগনাইজ্ড। এমনকি বিপিএমপিএ, কুমিল্লার ছোট বড় সব সেমিনারে ই স্যার নিয়মিত আসতেন। ঝড়বৃষ্টি কোন কিছুই স্যারকে বার্ধক্যেও উপস্থিত হতে বাধা দিতে পারেনি! এমনও হয়েছে বৈরি আবহাওয়ার কারণে একটি সেমিনারে স্পিকার ও স্যার সহ আমরা পাঁচ জন উপস্থিত ছিলাম।
স্যারের অবদানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কুমিল্লা বিএমএ স্যারকে ২০১৭ সালে 'গুণীজন সম্মাননা' প্রদান করে।
তার মৃত্যুতে কুমিল্লায় শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে, সকল শ্রেণি-পেশারর মানুষের সাথে তার মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে পরম করুণাময় আল্লাহপাকের কাছে তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি, আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসী করুক। আমিন।