তানভীর দিপু:
করোনা
ভারতীয় মিউট্যান্ট সংক্রমন রোধে সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে কুমিল্লার ৫টি
উপজেলাকে ‘স্বাস্থ্য নজরদারিতে’ রাখা হয়েছে। আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ,
চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং এবং ব্রাহ্মণপাড়াকে এই সম্মিলিত স্বাস্থ্য নজরদারিতে
রেখেছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ জেলা প্রশাসন ও বিজিবি। এসব উপজেলার অধিবাসীদের
কারো টানা জ্বর, সর্দি, কাশি বা করোনার উপসর্গ রয়েছে কি না এবং সেসব এলাকা
গুলোতে কেউ মৃত্যুবরন করলে তার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করা হবে বলে
কুমিল্লার কাগজকে জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন।
এদিকে সীমান্ত এলাকার তথ্য সংগ্রহ এবং করোনা প্রতিরোধে স্থানীয়
জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি সম্পৃক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক
মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
কুমিল্লা বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, অনুপ্রবেশ
ঠেকাতে সচেষ্ট আছে সীমান্তরক্ষীরা। যে সব এলাকায় কাটাতারের বেড়া নেই সেই
এলাকাগুলোর দিকে বিশেষ নজরদারি করছে বিজিবি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমন যেন
কুমিল্লা অংশ দিয়ে না বাড়ে সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে
তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে বাহিনীটি।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় সীমান্তবর্তী
জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমন বৃদ্ধি এবং ভারতীয় মিউট্যান্ট শনাক্ত হওয়ার তথ্য
প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৫০শতাংশের বেশি সংক্রমন শনাক্তের হার
হওয়ায় চাপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে সর্বাত্মক লকডাউনে রাখা হয়েছে ৭ দিন। এদিকে
ভারতের সাথে কুমিল্লার ৫ উপজেলার ১০৬ কিলোমিটারেরও বেশি সীমান্ত রয়েছে। এসব
সীমান্ত এলাকা জনবহুল এবং দুর্গম। কাটাতারের বেড়া থাকলেও বিজিবি-বিএসএফ এর
নজরদারির ফাঁক গলে বিভিন্ন সময় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। তাই কুমিল্লায়
করোনার ভারতীয় মিউট্যান্ট ঠেকাতে অনুপ্রবেশ ঠেকানোও জরুরি। অন্যদিকে বিবির
বাজার স্থলবন্দরে পণ্য আনা নেয়া চালু রয়েছে। সেদিকেও সর্বোচ্চ সতর্কতা
রাখা জরুরি মনে করেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ
কামরুল হাসান কুমিল্লার কাগজকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা হয়ে ভারত
থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কোন ঘটনা নেই। সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে
অনুপ্রবেশের তথ্য সহজে প্রশাসনকে দিতে পারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা,
এব্যাপারে সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা স্থানীয়
লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারে তাই তাদের
সম্পৃক্ত করার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিদের্শ দেয়া হবে।
এদিকে
সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, দেশের ভারতীয় সীমান্ততবর্তী
জেলাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কুমিল্লায়
ভারতীয় সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলাকে জেলাপ্রশাসন, স্বাস্থ্যবিভাগ, পুলিশ,
বিজিবির যৌথ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কারো টানা জ্বর সর্দি, কাশি বা করোনার
উপসর্গ আছে কি না - এসব উপজেলায় বাড়ি বাড়ি খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোথাও
কেউ মারা গেলে- তার মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া বিজিবি’র সাথে
কথা হয়েছে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর থাকবে বলে কথা দিয়েছে।
এছাড়া বিবির বাজার স্থল বন্দরকেও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ৫ উপজেলার
স্বাস্থ্য কমকর্তাদের সাথে বৈঠক করে করনীয় নির্ধারণ করা হবে।
তিনি
জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর
দিয়ে ভারত ফেরত ২৫৬ জন কুমিল্লার বিভিন্ন হোটেল ও হাসপাতালে কোয়ারিন্টিন
পালন করছে। তবে তাদের মধ্যে কেউ করোনা পজেটিভ শনাক্ত হন নি।
কুমিল্লা
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল জানান, এখনো
করোনা প্রতিরোধে সরকারি উপজেলা কমিটিগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত
করা হয়নি। কিন্তু ভারতের সাথে সীমান্ত থাকায় করোনার সংক্রমন এড়াতে ইউপি
চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের তথ্য সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে পারবে বিজিবি ও
প্রশাসন।
এদিকে গত ৭ দিনে কুমিল্লায় করোনা সংক্রমন শনাক্তের হার
উর্দ্ধমুখী বলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলায় করোনা সংক্রমন শনাক্তের হার ছিলো
৯ শতাংশের বেশি। গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেছেন ১১
জন। এ নিয়ে কুমিল্লায় সর্বমোট প্রাণহানির সংখ্যা ৪৩২।