বজ্রপাত থেকে বাঁচতে হবে
Published : Monday, 31 May, 2021 at 12:00 AM
মোশারফ হোসেন ||
সারাবিশ্বে
বজ্রপাতে যত লোক মারা যায়, তার উল্লেখযোগ্য অংশ মারা যায় বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বজ্রপাতকে জাতীয়
দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ২০১৬ সালে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে
সারাবিশ্বে বজ্রপাতের সংখ্যা প্রায় ৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে; আর বাংলাদেশে
বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। সাধারণত মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর
থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাত বেশি হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১০ বছরে
বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। বজ্রপাতে কোনো
শব্দ ছাড়া শুধু আলোর ফাশ দেখা যায়। এ বজ্র বিদ্যুতের রং সাধারণত লাল এবং
পিঙ্ক কালারের হয়ে থাকে। দ্বিতীয় ধরনের বজ্রপাত আকাশজুড়ে ডালপালার মতো হয়ে
থাকে। তৃতীয়ত, বজ্রপাত যেটি মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠে অর্থাৎ পৃথিবীতে পৌঁছায়।
এটি ঋণাত্মক। হাওর-বাঁওড় ও বিল এলাকার জেলাগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার
সবচেয়ে বেশি। বজ্রপাত সব কালেই ছিল। বজ্রপাত আগে মাঝেমধ্যে হতো কিন্তু
বর্তমান সময়ে এটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে প্রতিনিয়ত। তাপমাত্রা ও
বায়ুম-লের কার্বন ডাই-অক্সাইড, সিসা, সিএফসি গ্যাস, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির
ব্যবহার, ধাতব পদার্থ, মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন
ইত্যাদির অধিক মাত্রায় ব্যবহার।
উঁচু গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে
হ্রাস, বনভূমি, জলাশয়, নদী ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হচ্ছে, এসব কর্মকা-ের পরিণতি
দাঁড়াচ্ছে নেতিবাচকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন। গত ১০ বছরে বজ্রপাতে প্রাণ
হারিয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে
যেখানে বজ্রপাত ঘটেছিল ৬৫৮টি, সেখানে ২০১৫ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৯৫টি।
বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হচ্ছে সব সাধকের বড় সাধক আমাদের দেশের
মেহনতি মানুষ, যারা আমাদের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার জন্য নিবেদিত কৃষক
সমাজ। বেশিরভাগ সময় তারা বাইরে অর্থাৎ তে-খামারে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ
করেন। বজ্রপাতে মৃত্যুর হার, জানমালের তি ক্রমাগত বাড়ছে। কাজে নিয়োজিত
শ্রমিকদের মৃত্যুহার নিয়ে একটি সমীায় জানা গেছে, শ্রমিকদের েেত্র মৃত্যুর
হার ৭৪%, গ্রামের কৃষকদের ১৫%, অন্যান্য েেত্র ১১%। মানুষ ছাড়াও গবাদি পশু,
পাখি বজ্রপাতের শিকার হচ্ছে। বজ্রপাত বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এটা
আমাদের সৃষ্টকর্মের ফল। প্রকৃতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পাল্টা জবাব দেয়। মানুষ
সচেতন হলে এ দুর্যোগ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা
তাদের সাম্প্রতিক পর্যবেণে বলেছে, দেশে বজ্রপাতের পথ বদলাচ্ছে।
দণি
বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ুপ্রবাহ এবং উত্তর দিকে হিমালয়
পর্বতমালার জন্য এটা ঘনীভূত হয়ে অথবা কেন্দ্রীভূত হয়ে পশ্চিমাংশে বজ্রঝড়
উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসছে। মূলত দেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাত
বেশি হতো। দিনে দিনে সরে আসছে দণি ও মধ্যাঞ্চলের দিকে। এখন দেশে প্রায় ১৭টি
জেলা ঝুঁকিপূর্ণ। সংবাদমাধ্যম, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, সামাজিক,
সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সুশীল সমাজসহ সবাই জনসচেতনতায় এগিয়ে এলে ভালো ফল
আসতে পারে। এ ছাড়াও শ্রেণিকে শিক-শিার্থীর মুক্ত আলোচনা থেকে জনসাধারণ
সচেতন হতে পারে। স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগ, কৃষকদের নিয়ে উঠান
বৈঠক, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে সভা-সেমিনার ও সচেতনতামূলক
কর্মসূচি পালন করা যেতে পারে। বজ্রপাতের সতর্কতামূলক তথ্য পাওয়ার পর সেটি
তাৎণিকভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের ওয়েদার
অ্যাপসের মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কৃষক যখন মাঠে
কাজ করতে যাবে, তখন একাধিক বাঁশের মাথায় লোহার দ- দিয়ে বেঁধে বাকি অংশ
মাটির নিচে পুঁতে রাখলে, সাময়িকভাবে হলেও বজ্রপাত থেকে রা পাওয়া যায়।
বিভিন্ন
মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার একযোগে কাজ করতে
হবে। এক কে না থেকে আলাদা আলাদা কে থাকতে হবে, যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক
ব্যবস্থা না থাকে। বজ্রপাত নিয়ে আইডিইবির সদস্য প্রকৌশলীরা কাজ করছে এবং
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ইতোমধ্যে সরকার ১০ হাজার তালগাছ
লাগিয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ওড়িশায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক
গবেষণা চলছে। এ ছাড়াও আমেরিকা, ভেনিজুয়েলাসহ বিভিন্ন দেশ বজ্রপাত নিয়ে কাজ
করছে। বজ্রপাত ধীরে ধীরে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিকে যাচ্ছে। এ জন্য
ব্যপক জনসচেতনা ও শিার প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।
প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান, সরকারি ইস্পাহানী কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা