ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কান্নাই কাল হলো শিশু আমির হামজার
Published : Monday, 31 May, 2021 at 6:21 PM
কান্নাই কাল হলো শিশু আমির হামজার শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
আমির হামজার বয়স মাত্র এক বছর আট মাস। এ বয়সেই নির্মমতার শিকারে পরিণত হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিলো তাকে। তার অপরাধ ছিল সে কাঁদছিল। তাই তাকে  গলায় আঘাত ও পরে শ্বাসরোধে মেরে ফেলা হয়। মেরেই ক্ষান্ত হয়নি শিশুটির ফুফু স্বপ্না আক্তার। নিজেকে বাঁচানোর জন্য খেচুনি দিয়ে মারা গেছে বলে এমন নাটকও মঞ্চস্থ করেছিলেন তিনি। তখন তার কথাই সবাই বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না তার। পুলিশ রোববার (৩০ মে) রাতে সন্দেহভাজন স্বপ্নাকে আটক করে। ঘটনাটি গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যার। এ ঘটনার পরদিন দেবিদ্বারে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন শিশুটির মা সালমা বেগম। ঘটনাটি উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সাইচাপাড়া এলাকার। হতভাগ্য আমির হামজা ওই এলাকার আল আমিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দৈনিক শ্রমিক।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শিশু আমির হামজা কান্না করছিলো মাটিতে বসে। পাশেই রান্না করছিলেন তার আপন ফুফু স্বপ্না আক্তার। অতিরিক্ত কান্না করায় স্বপ্না আক্তার বিরক্ত হয়ে তরকারী গরম কাঠি দিয়ে প্রথমে শিশুটির গলায় আঘাত করে পরে শিশুটিকে খাটের বিছানায় চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. মাহবুবুর রহমান জানান, আমির হামজার মৃত্যুও পর তার ফুফুসহ পরিবার সকলে বলছিলো খেচুনি রোগে তার মৃত্যু হয়। তখন দেবিদ্বার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন তার মা সালমা বেগম। তখন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এসআই মোর্শেদ। তিনি অন্যত্র চলে যাওয়ায় চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তদন্তভার পরে আমার উপর।  গত ২৮মে সকালে  শিশুটির পোস্টমডেম ও সুরতহাল রির্পোট হাতে পেলে ঘটনায় ভিন্নদিকে মোড় নেয়। মেডিকেল রির্পোটের সূত্র ধরে শুরু হয় অধিকতর তদন্ত ও পর্যালোচনা। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ হলে শিশুটির ফুফু স্বপ্নার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে দায় পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিবরণ খুলে বলেন। এ ঘটনায় ওই রাতেই আগের অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলায় স্থানান্তর করা করা হয়।
ঘটনার বিবরণে ঘাতক স্বপ্না আক্তার পুলিশকে জানান, আমির হামজা অতিরিক্ত কান্না করায় বিরক্ত হয়ে তাকে খাটের বিছানায় চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এর আগে রান্না করার কাজে ব্যবহৃত গরম কাঠের কাঠি দিয়ে তার গলা ঘাড়ে  আঘাত করা হয়। পরে সে বাঁচার জন্য খেচুনি রোগে মারা গেছে বলে নাটক সাজায়।শিশুটির দাদা মো. সুলতান আহমেদ (বাবুর্চি) জানান, আমির হামজার বাবা-মা পারিবারিক কলহের কারণে তাকে বাড়িতে আমাদের কাছে কুমিল্লায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার মা গার্মেন্সে চাকরি করতে আর বাবা বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কাজ করতেন। বাড়িতে আমির হামজাকে তার ফুফুই দেখাশুনা করতো। কেন তাকে হত্যা করলো আমি জানিনা। আমরা এতোদিন জানতাম খেচুনিতে আমির হামজার মৃত্যু হয়েছে।
ওসি মো. আরিফুর রহমান জানান, শুধু কান্নাকাটি করার জন্য একটি শিশুকে হত্যা করেছে তারই আপন ফুফু। ভাবতেই যেন কেমন লাগে। স্বপ্না বেগম কুমিল্লা ৪নং বিজ্ঞ আমলি আদালতের বিচারক রোকেয়া বেগমের কাছে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দিয়েছে। সোমবার স্বপ্নাকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন,  যারা অপরাধ করবে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন নীতিতে পুলিশ কাজ করছে।