শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই কোপা আমেরিকা। ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি লিওনেল মেসির। কখনো জেতা হয়নি কোপা আমেরিকাও। এবারের কোপা শিরোপা জিতে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে অপূর্ণতা ঘুচাতে পারবেন মেসি?
পেলে, ম্যারাডোনাও জেতেননি কোপা আমেরিকা। পেলে পুরো ক্যারিয়ারে একবারই খেলেছিলেন ১৯৫৯ সালে, বিশ্বকাপ জেতার পরের বছরই। সেবার আট গোল করে আসরসেরাও হয়েছিলেন। তবে শিরোপা জিতে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। আর সেসময় ব্রাজিল এই দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপটাকে অত গুরুত্ব দেয়নি। প্রায়ই তরুণ একটা দল খেলিয়ে দিত। পেলে আর সান্তোস বরং ব্যস্ত থাকত দেশে-মহাদেশে তাঁদের অর্থকরী সফরগুলো নিয়ে।
১৯৯৩ সালে শেষবার যখন আর্জেন্টিনা জেতে এ আসর, তখন ম্যারাডোনা থেকেও নেই। ড্রাগ নেওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছেন, ফিরলেও তাঁর সেই পারফরম্যান্স নেই। কোচ আলফিও বাসিলে তাঁকে বাদ দিয়ে ডিয়েগো সিমিওনেকে দেন ১০ নম্বর জার্সি। তার আগে ’৮৭- তে পেলের মতোই বিশ্বকাপ জিতে সে আসরটাও মাতিয়েছিলেন। কিন্তু শিরোপা শেষ পর্যন্ত উরুগুয়ের।
পেলে, ম্যারাডোনার এই একটি টুর্নামেন্টের অপূর্ণতা নিয়ে তবু কে কথা বলে! তাঁদের মুকুটে যে আরো মূল্যবান পালক আছে—বিশ্বকাপ। লিওনেল মেসির তা নেই। চারটি বিশ্বকাপ খেলেও সেই আক্ষেপ জুড়ায়নি, তাই বলে একটা কোপার শিরোপাও জুটবে না! কিন্তু এখানেও একই দীর্ঘশ্বাস। বিশ্বকাপের থেকেও এখানে বারবার ট্রফির খুব কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরার জ্বালাটা বেশি। ২০০৭ সালে তরুণ মেসির সঙ্গে হার্নান ক্রেসপো, কার্লোস তেভেজ, রিকুয়েলমে, পাবলো আইমার মিলে অসাধারণ একটা দল, কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলে ফাইনালে তাদের ব্রাজিলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ। ২০১১-তে কোয়ার্টার ফাইনালেই কপাল পুড়ল কার্লোস তেভেসের টাইব্রেকারের শেষ শট মিসে। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ দুটি ফাইনালে চিলি আগুন জ্বালিয়েছে আলবিসেলেস্তেদের গায়ে। দহনটা মেসিরই হয়েছে বেশি, বিশ্বকাপের পরপর দুটি কোপার ফাইনাল হেরে অবসর নেওয়ার কথাও ভেবে ফেলেছিলেন। সেই মেসি আরো একবার স্বপ্ন নিয়ে ফিরেছেন এই কোপায়। ৩৪ বছর বয়সে হয়তোবা শেষবারের মতো। সেই একই ক্ষুধার কথা জানিয়েছেন তিনি সমর্থকদের, ‘কোপা জেতাটা সব সময়ই আমাদের স্বপ্ন। আর্জেন্টিনার হয়ে যেকোনো একটি ট্রফি জেতার জন্যই আমরা মুখিয়ে আছি। যারা পুরনো তাদের সেই অপেক্ষা, চাওয়াটা আরো তীব্রই।’
এবার নিজ দেশেই চাওয়াটা পূরণে নামতে পারতেন, কিন্তু করোনায় সব এমন উলটপালট হয়ে গেল যে ঘরের আসর তাদের খেলতে হচ্ছে কিনা চিরশত্রু ব্রাজিলের মাঠে। তাতে চ্যালেঞ্জটা আরো বাড়লই আকাশি-সাদাদের জন্য। গতবার ব্রাজিলের কাছে হেরে সেমিফাইনালে বিদায়। যদিও সেই ম্যাচের রেফারিং নিয়ে আর্জেন্টাইনরা ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। এবারের মিশন তাই প্রতিরোধ মিশনও হতে পারে তাদের। তবে যেভাবেই ভাবা হোক না কেন, মেসির যে এই ট্রফিটা চাই-ই। সর্বকালের সেরা হওয়ার লড়াই যাঁর, জাতীয় দলের হয়ে একটা বড় শিরোপা না হলে কি তাঁর চলে!