ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
স্বস্তি ফিরেছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায়
কুমিল্লা-৫ আসনে এড. হাসেম খানের মনোনয়ন
Published : Sunday, 13 June, 2021 at 6:44 PM, Update: 13.06.2021 8:54:16 PM
 স্বস্তি ফিরেছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায়জহির শান্ত, 
আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা এডভোকেট আবুল হাসেম খান নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে। বিভিন্ন সময়ের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং দলের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল-দ্বন্দ্ব তৈরি করে রাখা নেতাদের বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন রাজনিতিক এবং দলের নিবেদিত প্রাণ হাসেম খানের মনোনয়নকে নেতা-কর্মীরা দেখছেন আশির্বাদ হিসেবে। তারা বলছেন, প্রয়াত আবদুল মতিন খসুরুর যোগ্য উত্তরসূরীকেই বেছে নিয়েছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবাইকে চমকে দিয়ে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনের উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
শনিবার (১২) জন সংসদীয় বোর্ডের সভা শেষে নৌকা প্রতীকের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। আর সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কুমিল্লা-৫ আসনে শেষ হাসি হাসেন বুড়িচংয়ের প্রবীণ নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আবুল হাসেম খান। যদিও এ উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে দলটির ৩৫ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।  এ আসন থেকে এতোজনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টিও বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। 
জানা গেছে, শনিবার গণভবনের বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ নেতাদের ছোট্ট তালিকা চান। জানতে চান প্রবীণ নেতা ও দলের জন্য অবদান আছে কার? সে প্রশ্নের মিমাংসায় নাম উঠে আসে হাসেম খানের। শেষ বয়সে সম্মান জানানো আর আওয়ামীলীগে অবদানের কথা মাথায় রেখে মনোনয়ন দেওয়া হয় হাসেম খানকে। এছাড়া গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেওয়ার পরও তাকে হারিয়ে দেওয়ার তথ্যও ছিলো সামনে। সব মিলিয়ে শেষ হাসি ফুটে হাসেম খানের মুখে। আর এ সিদ্ধান্তে কপাল পুড়ে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় থাকা অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর। যাদের প্রচার-প্রচারণা ও শোডাউনে এতোদিন মুখর ছিলো বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার জনপদ। কিন্তু সবাইকে চমকে মনোনয়ন দৌড়ে প্রথম হয়ে গেলেন এ জনপদেরই নিভৃতপদচারী হাসেম খান।
শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্ত কেবল হাসেম খানের মুখেই নয়; হাসি ফুটিয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মুখেও। বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার আওামী লীগের অন্তত ১০জন নবীন ও প্রবীণ নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জর্জরিত এ দুই উপজেলায় একজন স্বচ্ছ্ব ও মানবিক নেতার প্রয়োজন। যিনি আবদুল খসরুর শূন্যতা পূরণ করতে না পারলেও অন্তত নেতা-কর্মীদের আশ্রয় দিয়ে, সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারবেন। আর সে ক্ষেত্রে আবুল হাসেম খানই যোগ্য ব্যক্তি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, আবুল হাসেম খানের মনোনয়ন দলের নেতা-কর্মীদের জন্য শুভবার্তা বয়ে এনেছে। তিনি একজন সাংগঠনিক ব্যক্তি ও দলের ত্যাগী নেতা। আওয়ামী লীগে তার অনেক অবদান রয়েছে। নেত্রী (শেখ হাসিনা) যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দিয়েছেন, আমরা তাঁর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। 
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছেন। তিনি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, এডভোকেট আবুল হাসেম খানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। দল ও এলাকার সার্থে তার মতো একজন মানুষই আমাদের প্রয়োজন ছিলো। স্বস্তি ফিরেছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায়
বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান খান বলেন, আবু হাসেম খানের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর আশার প্রতিফলন ঘটছে। আমি মনে করি, আমাদের জন্য এটা নেত্রীর উপহার এবং বিদ্রোহী ও কোন্দলসৃষ্টিকারী নেতাদের জন্য সতর্কবার্তা। যারা টাকার বিনিময়ে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেতে চান, গাড়ি-ঘোড়া নিয়ে শোডাউন করতে চান- তাদের জন্য হুঁশিয়ারি সংকেত। জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের খবর রাখেন, তাদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্যাণ করেন।
তিনি বলেন, হাসেম খান একজন ভালো মানুষ, নির্লোভ ব্যক্তিত্ব। বীর মুক্তিযোদ্ধা এ মানুষটি দীর্ঘদিন শুধু দলের জন্য দিয়েই গেছেন। অবশেষে তিনি মূল্যায়িত হয়েছেন।
বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি ওনার (হাসেম খান) সাথে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। কিন্তু তাঁর প্রতি সম্মান কমেনি। আমি তাকে আমার চেয়ারে বসতে দেই। হাসেম খান মুরব্বী মানুষ, দলের ত্যাগী নেতা। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মূল্যায়ন করেছেন- এতে আমরা অনেক খুশি। বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ শান্তিপ্রিয়। তাঁকে মনোনয়ন দেয়ার মাধ্যমে নেত্রী আমাদের কাছে শান্তির বার্তা পাঠিয়েছেন।
‘মনোনয়ন পাওয়ার পর হাসেম খান আপনার পিতা মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের কবর জিয়ারতে গিয়েছিলেন- কিন্তু আপনি ছিলেন না, কেন?;- এমন প্রশ্নের জবাবে আখলাক হায়দার বলেন, আমাদের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব নেই-মতবিরোধ নেই। তিনি আমাকে বলেই এসেছিলেন। আমি তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে অন্য এক জায়গায় ছিলাম। যার কারণে থাকতে পারিনি। এ নিয়ে প্রশ্নর সুযোগ নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান কুমিল্লা-৫ আসনের ৫ বারের এমপি ও সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর ২২ এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এপর গত ২ জুন এ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৮ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে কুমিল্লা-৫ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর রবিবার (১৩) জুন ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিৃকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এডভোকেট আবুল হাসেম খান। এসময় তার সাথে দলের বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাও উপস্থিত ছিলেন।