সুন্দরবন সম্প্রসারিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বনের আয়তন বাড়াতে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ও কার্বন মজুদ বাড়ছে বলেও তিনি জানান।
বুধবার (১৬ জুন) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের বেগম সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে ২০১৫ সালের বাঘ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিলো ১০৬টি। ২০১৮ সালের শুমারিতে এই সংখ্যা ১১৪টি পাওয়া গেছে। সুন্দরবনের কার্বন মজুদের পরিমান ২০০৯ সালের ১০৬ মিলিয়ন টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালে ১৩৯ মিলিয়ন টন হয়েছে।
বর্তমান সরকার সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে সব সময় আন্তরিক ও বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, দেশের উন্নয়নে যে পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন সুন্দরবন এবং এর জীববৈচিত্র্য যেন কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুন্দরবনের আয়তন বাড়ানোর জন্য সরকার কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে এর বিস্তৃতি ঘটানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সাথে সুন্দরবনের বৃক্ষাদি এবং বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য তথা বন অপরাধ দমনের জন্য স্মার্ট পেট্রোলিংসহ নানাবিধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, জীববৈচিত্র্যের আধার সুন্দরবনে এখন ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভদ, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী পাওয়া যায়। বন্যপ্রাণীর মধ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ২১০ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে।
সুন্দরবনের গাছপালা ও বন্যপ্রাণীকূলকে রক্ষার জন্য বনকর্মীদের যুগোপযোগী করে তুলে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পদক্ষেপের কথাও জানান সরকার প্রধান।
২০১৭ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনের প্রায় ৫৩% এলাকা অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত।
সুন্দবনের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা এ সময় প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের আনোয়ার হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যে সকল স্থানে অবস্থান করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সে সকল স্থান বিশেষভাবে সংরক্ষণের জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্মরণে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে ১৫০ ফুট উঁচু গ্লাস টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। যশোরের রাজগঞ্জ বাজারে ও ফরিদপুরের আম্বিকা ময়দানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার মিন্টু রোড ও আব্দুল গণি রোডস্থ ভবনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিলো বিধায় সেগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যে সকল স্থানে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ স্মৃতি বিজড়িত ঐ সকল স্থান ঘটনার তাৎপর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় স্মৃতি স্বরূপ সংরক্ষণ করা হলে তরুণ ও ভবিষ্যত প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে।
শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের গণমাধ্যমকে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছে।
তিনি জানান, বর্তমানে দেশে প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা তিন হাজার ২২২টি। এছাড়া সরকার বেসরকারি খাতে ৪৫টি টেলিভিশন, ২৭টি এফএম রেডিও এবং ৩১টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের ফলে গণমাধ্যম অঙ্গন শক্তিশালী হয়েছে। দেশে টিভি চ্যানেলগুলো এখন অনেক কম খরচে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালন করছে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।