চিত্রনায়িকা পরীমণির হত্যা ও ধর্ষণচেষ্টায় করা মামলায় প্রধান আসামিসহ পাঁচজন দ্রুতই গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল এ নায়িকাকে আবার ডিবি কার্যালয়ে তলব করা হয়েছিলো। গত কয়েকদিনের ঘটনা নিয়ে সমকালের মুখোমুখি হন পরীমণি।
শারিরীকি ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন আপনি । এখন কেমন আছেন?
মানসিকভাবে অনেকটাই সুস্থ এখন। মনে হচ্ছে মাথার উপর থেকে বিশাল পাহাড় নেমে গেছে। তবে শারিরীকভাবে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠিনি। কদিন বেশ ধকল গেলো জীবনের উপর দিয়ে। পুরোপুরো ঠিক হতো আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
আপনার তো এই সময়ে একটি ওয়েব ফিল্মের শুটিংয়ের অংশ নেওয়ার কথা ছিলো। শুটিংয়ের কি হচ্ছে?
শুটিংয়ে পেছাতে হয়েছে। এই অবস্থায় তো শুটিংয়ে অংশ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমি তো আর জানতাম না এমন একটা দূর্ঘটনা আমার জীবনে ঘটবে। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হবে। সুস্থ হওয়ার পর দ্রুত শুটিংয়ে ফিরবো।
ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কি আপনাকে ডাকা হয়েছিলো না নিজেই গিয়েছিলেন?
আমাকে ডাকা হয়েছিলো। তবে সেখানে গিয়ে আমি অবাকই হয়েছি। দীর্ঘক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। আমাকে ট্রমা থেকে উঠে দাঁড়াতে সাহস দিয়েছেন। কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি তা নিয়ে কথা বলেছেন। অপরাধী যেই হোক প্রমাণ হলে তিনি শাস্তি পাবেন বলেও আশ্বস্থ করা হয়েছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেমন লাগছে?
আমার সঙ্গে দূর্ঘটনা ঘটার পর থেকেই আমি বিচার চাইছি। যখন মিডিয়ার মাধ্যমে বিচার চাইলাম। তার একদিনের পরই টিভিতে দেখলাম অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয়েছে। বিশ্বাস করেন তখন আমার ভেতরে নতুন কের সাহস ফিরে এসেছে। সেই শক্তিতে আজ কথা বলতে পারছি। সবার এতো সমর্থন বিফলে যায়নি।
এতো দ্রুত এমনটা ঘটবে ভেবেছিলেন?
না, এটা প্রত্যাশা করিনি। শিল্পী সমিতিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো উপকার পাইনি। তখন আমি অভিভাবক হিসেবে খুঁজেও কাউকে পাইনি। চারদিনে আমার জীবনে যা ঘটেছে আগে কখনো ঘটেনি। ঘটনাটির পর শুরু থেকে যাদের কাছে গিয়েছি তারা প্রত্যেকে আমাকে থামিয়ে দিয়েছেন। এরপর খুব নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করি। সেইসময় মনে হয়, আমি যদি মরে যাই তবে দোষীদের নিয়ে মরি। একা কেন মরবো? যখনই বিষয়টি পাবলিক করি (ফেসবুক পোস্ট) তারপরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে এটা আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল।
এক বিবৃতিতে শিল্পী সমিতি আপনার পাশে ছিলো বলে জানিয়েছে। সত্যিই কি পাশে ছিলো?
গণমাধ্যমকর্মীদের আগে শিল্পী সমিতিকে আমি জানিয়েছি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান প্রথমে আশ্বাস দিয়েছিল। ভরসা পেয়েছিলাম। দু’দিন চলে যাওয়ায় আমাকে একবার ফোন করে খোঁজ নেয়নি। এতে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। হতাশ হয়েছি। উপায় না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেই। এখন যদি সমিতি থেকে বলে আমার পাশে আছে, তাহলে থাকুক। তবে আমি যাদের আপন ভাবতাম, কিছু হলেই যাদের বাসা পর্যন্ত যেতাম তাদের কেউ আমার পাশে এস দাঁড়ায়নি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই পাশে পেয়েছি আমার সাংবাদিক ভাইদের। এই বিপদেও তাদের পেলাম। তাদের বিকল্প ছিল না। এছাড়া প্রশাসন দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের আইন কতোটা শক্তিশালী। তারা চাইলেই সবকিছু পারে।
সাংবাদিকরা আপনার পাশে সবসময় থাকেন। আপনার বিরুদ্ধে এই সাংবাদিকদের সাথে দুর্বব্যবহার অভিযোগ আছে...
এটা মিথ্যা অভিযোগ। যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা কখনও প্রকৃত সাংবাদিক ছিল না। নামে মাত্র ছিল। যদি কারও সাথে দুর্বব্যবহার করে থাকি তাহলে তার সাংবাদিকতার জন্য নয়, সেই ব্যক্তির আচরণের জন্য করেছি। যারা সত্যিকারের সাংবাদিক তারা শুরু থেকে আমাকে সাপোর্ট করেছেন। আমিও তাদের সম্মান দিয়েছি।
এই ঘটনায় ভবিষ্যতে কোনো ঝামেলার আশঙ্কা করছেন কী?
এই ঘটনার রেশ আজীবন থেকে যাবে। যতদিন না দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয় আমি শান্তি পাব না। যে অপরাধটা আমার সাথে করেছে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির বাস্তবায়ন চাই। সবাই এখন যেমন বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন, এটির যদি সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো আর অন্যদের সাথে এমনটি হবে না।
যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে লড়তে আপনার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে তো?
যা যা প্রমাণ ছিল, যথেষ্ট ছিল। আমি সবকিছু জমা দিয়েছি। ওইদিনে সেখানকার সিসি টিভির ফুটেজগুলো আমি খুব চাই। যাতে দ্রুত সংগ্রহ করা হয়।