দেবীদ্বার পানিপড়া খাওয়ানোর নামে ধর্ষণের অভিযোগ, কিশোরী অন্ত:সত্ত্বা
Published : Wednesday, 23 June, 2021 at 12:00 AM
এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
দেবীদ্বারে মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীতে পড়–য়া এক কিশোরী(১৫) কবিরাজের কাছ থেকে পানিপড়া খেয়ে এখন ৮ মাসের অন্তস্বত্বা।
ঘটনাটি
ঘটে প্রায় ৮ মাস পূর্বে দেবীদ্বার উপজেলার ভাণী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের
মৃত; কবিরাজ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া(মেইকার)’র পুত্র কবিরাজ মোঃ ইকরাম হোসেন
কানন ভূঁইয়ার বসত বাড়িতে।
ঘটনার পর বিষয়টি কাউকে না জানাতে কবিরাজের
নির্দেশ ছিল, জানালে গুম-খুণ সহ নানাভাবে ক্ষতি করার হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে
ভিক্টিম কিশোরী জানিয়েছেন। ৮ মাসের অন্তস্বত্বা ওই কিশোরী এখন সন্তানের
পিতৃপরিচয়ের দাবীতে সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
স্থানীয়রা জানান,
ঘটনার দিন সাহারপাড় গ্রামের দরিদ্র এক কৃষকের কণ্যা এবং ‘সূর্যপুর দাখিল
মাদ্রাসা’র ১০ শ্রেণীর ছাত্রী(১৬) তার প্রেমিককে বসে রাখতে পানিপড়া আনতে
পাশর্^বর্তী সূর্যপুর গ্রামের কানন কবিরাজের কাছে যায়। ওই কিশোরী(১৬) কানন
কবিরাজের কাছে যাওয়ার সময় তার প্রতিবেশী আপন খালাতো বোন একই মাদ্রাসায়
পড়–য়া নবম শ্রেণীর ছাত্রী(১৫)কে নিয়ে যায়।
কানন কবিরাজ দশম শ্রেণীতে
পড়–যা কিশোরী(১৬)কে পানিপড়া দিয়ে পাশের ড্রইংরোমে বসতে বলে তার খালাতো
বোন(১৪)’র জন্যও পছন্দের বর পেতে পানিপড়া খাওতে পাশের রোমে নিয়ে যায়।
কিছুক্ষণপর ওই কিশোরী এসে তার খালাতো বোনকে জানায় কবিরাজ আমারতো সর্বনাম
করে ফেলেছে। তখন তার বোন জানায় কিছু হবেনা, কাউকে কিছু বলিস না। কানন
কবিরাজ বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক।
অন্তস্বত্বা কিশোরীর মা’ বলেন,
আমার মেয়ে স্থানীয় সূর্যপুর দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীতে পড়ে। তার জীবনে
এরকম ঘটনা ঘটবে কখনোই ভাবিনি। গত রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার শরীরের
অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখে জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনা জানতে পারি। প্রায় ৮মাস
পূর্বে একই মাদ্রাসায় ১০ম শ্রেণীতে পড়–য়া(১৬) আমার বোনের মেয়ে তার
প্রেমিককে বসে রাখতে পাশর্^বর্তী সূর্যপুর গ্রামের কানন কবিরাজের কাছে যায়।
যাওয়ার সময় আমার মেয়েকে নিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, প্রথমে বিষয়টি
পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করি, কবিরাজ পরিবারের পক্ষ থেকে সমাধানের
আশ^াসও দেয়া হয়। তবে সাংবাদিক, থানা পুলিশ কিংবা আদালতের আশ্রয় নিলে বাড়িঘর
জালিয়ে তাদের গ্রাম ছাড়া করারও হুমকী দেয়া হয়।
ভিক্টিমের বাবা বলেন,
আমি অত্যন্ত দরিদ্র, মেয়েকে মানুষের সহযোগীতায় লেখাপড়া করিয়ে আসছি। কানন
কবিরাজ পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় সমাজপতিদের মধ্যেও পিছুটান দেখা দেয়।
হুমকীর মুখে আমার মেয়েকে আত্মগোপনে রেখে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
হচ্ছে। কানন কবিরাজ সূর্যপুর ও সাহারপাড় গ্রামের আরো ৩টি মেয়ের সর্বনাশ
করে টাকা এবং প্রভাবের জোড়ে পারপেয়ে গেছে। আমি এখন সমাজের সিদ্ধান্তের
বাহিরে যেতে পারছিনা।
মোঃ নজরুল ইসলাম ভূইঁয়া জানান, ঘটনা মিমাংসার
স্বার্থে তিন দফা সালিস ডাকা হয়। অভিযুক্ত ধর্ষক কবিরাজ কানন ভূঁইয়া কোন
সালিসেই উপস্থিত থাকেনি। কবিরাজের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের দায়ে
অভিযুক্ত গত ১৩ জুন এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্তও
মানছেনা। ধর্ষক কবিরাজ পলাতক থাকার অজুহাতে এবং বিপুল অর্থব্যয়ে ঘটনাটি
ধামাচাপা দেয়াই নয়, তালবাহানা শুরু করেছে।
গত ১৩জুন সাহাড়পাড় মো. আজহার
মেম্বারের বাসভবনের ছাদের উপর ভাণী ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক বিশিষ্ট
ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এক সালিসের আয়োজন করা হয়।
সালিসে ইউনিয়ন
আ’লীগ’র সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি মেম্বার জহিরুল ইসলাম’র সভাপতিত্বে এবং
ইউনিয়ন আ’লীগ’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন মেম্বারের সঞ্চালনায়
অনুষ্ঠিত সালিসে উভয় পক্ষের আলোচনা শেষে ধর্ষনের দায়ে অভিযুক্ত কানন
কবিরাজের অনুপস্থিতিতে পরিবারের পক্ষে তার বড় ভাই মোঃ কামাল হোসেন ও চাচা
মোঃ আক্তারুজ্জামান দায় স্বীকার করে করনীয় সম্পর্কে সালিসের সিদ্ধান্ত মেনে
নেবেন বলে জানান।
সালিসের সভাপতি ইউনিয়ন আ’লীগ’র সহ-সভাপতি ও সাবেক
ইউপি মেম্বার জহিরুল ইসলাম জানান, ওই সালিসে ১৩সদস্যের একটি জুরিবোর্ড গঠন
করা হয়, জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬জুন অন্ত:স্বত্বা কিশোরীর অনাগত
সন্তানের পিতৃপরিচয়ের স্বীকৃতি দানে কানন কবিরাজের সাথে বিবাহ বন্ধনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি।
জুড়ীবোর্ডের সদস্যরা হলেন,
মোঃ মনিরুল হক মুহুরী, অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমিন, আবু মুছা ভূঁইয়া, মোঃ বাবু
ভূঁইয়া, মোঃ নজরুল ইসরাম ভূঁইয়া, মোঃ জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মোঃ আক্তার হোসেন
ভূঁইয়া, মোঃ মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, মোঃ আজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মোঃ আউয়াল
মেম্বার, মোঃ ফরিদ উদ্দিন মেম্বার, মোঃ স্বপন ভূঁইয়া, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
মেম্বার।
মঙ্গলবার দুপুরে মোঃ আজহার মেম্বার জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর,
মেয়েটি নাবালিকা, এ ঘটনা আইন আদালতের বাহিরে বিচার-সালিসে সমাধান যোগ্য নয়,
তবুও সামাজিক স্বার্থে চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছি। মেয়ে পক্ষ আইনী
সহায়তানিলে সার্বিক সহযোগীতা করব।