যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলতি বছরের সিটি নির্বাচনে এবার কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র পেতে যাচ্ছে নিউইয়র্কবাসী। প্রায় ২৮ বছর পর নিউইয়র্কবাসী পাবেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র।
ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত ‘র্যাংকড চয়েস ভোটিং’ এ মেয়র পদে এগিয়ে আছেন ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট কৃষ্ণাঙ্গ এরিক অ্যাডামস। যদিও বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।
কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত প্রাইমারীতে ভোটারদের প্রথম পছন্দের প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আছেন, কিন্তু বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক না পাওয়ায় বিজয়ী ঘোষণার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২২ জুলাই মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল ভোটগ্রহণ শেষে প্রদত্ত ভোটের ৮০ শতাংশের ফলাফলের প্রেক্ষিতে ৩১.৬ শতাংশ ভোটার এরিক অ্যাডামসকে তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে ভোট দিয়েছে।
অপর এক প্রার্থী, মায়া উইলি, যিনি বর্তমান সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও’র উপদেষ্টা ছিলেন, তিনি ভোটারদের দ্বিতীয় পছন্দের প্রার্থী হিসেবে পেয়েছেন ২২.৩ শতাংশ ভোট।
১৯.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন সাবেক স্যানিটেশন কমিশনার ক্যাথরিন গর্সিয়া। দু’জনের মধ্যে একজন সিটির প্রথম নারী মেয়র হয়ে ইতিহাস গড়তে পারেন। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এন্ড্রু ইয়াং অনেক কম ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছেন।
এরিক অ্যাডামস সিটির পাঁচটি বরোর মধ্যে ম্যানহাটান ছাড়া চারটি বরোতেই এগিয়ে আছেন। ম্যানহাটানে গর্সিয়া বেশ শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু অ্যাডামসের পক্ষে র্যাংকড চয়েস ভোটিং এর সূত্র অনুযায়ী যেহেতু ভোটারদের প্রথম পছন্দ হিসেবে ৫০ শতাংশের অধিক ভোট নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে, সেজন্য তিনি এগিয়ে থাকলেও তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
নতুন ভোটদান পদ্ধতি অনুযায়ী ভোটাররা তাদের পছন্দের ক্রমানুযায়ী ৫ জন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং এক্ষেত্রে ‘অ্যাবসেন্টি ব্যালটও’ গণনা করা হবে।
এজন্য ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে মেয়র পদে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতে মধ্য জুলাই পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে এবং বিজয়ী প্রার্থীই আগামী নভেম্বরে মেয়র পদে প্রতিদ্বনিদ্বতা করবেন।
ভোট গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার রাতে এরিক অ্যাডাম তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমিই আপনাদের মেয়র হতে যাচ্ছি। আজ রাতে আমরা অনেক এগিয়েছি। আমি চাই আপনারা আপনাদের আস্থায় দৃঢ় হোন। নগরীকে আমরা একত্রে আগের অবস্থানে নিয়ে আসব। একটি নগরী হিসেবে আমরা আমাদের দু:খগুলোকে সংকল্পে পরিণত করতে যাচ্ছি। আমাদের নগরী নিরাপদ, অ্যাফোর্ডেবল ও সুন্দর হতে যাচ্ছে।
প্রাপ্ত ভোট সংখ্যার দিক থেকে এরিক অ্যাডামস পেয়েছেন ২৫৩,২৩৪ ভোট, মায়া উইলি ১৭৭,৭২২ ভোট, ক্যাথরিন গর্সিয়া ১৫৫,৮১২ ভোট এবং এন্ড্রু ইয়াং ৯৩,২৯১ ভোট। অ্যাডামস ব্রুকলিন বরোতে ৩৬ শতাংশ, কুইন্সে ৩৩ শতাংশ, ব্রঙ্কসে ৪৬ শতাংশ, স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে ৩১ শতাংশ এবং ম্যানহাটানে ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
সিটি কম্পট্রোলার পদে ব্র্যাড ল্যান্ডার ভোটারদের প্রথম পছন্দ হিসেবে ৩১ শতাংশ এবং কোরে জনসন ভোটারদের দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। পাবলিক এডভোকেট পদে ৭১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বা ভোটারদের দ্বিতীয় পছন্দ অ্যান্থনি হার্বার্ট পেয়েছেন ২১ শতাংশ ভোট।
সিটির ৫টি বরোর মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অনুষ্ঠিত প্রাইমারীতে কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট পদে পুন:নির্বাচনের জন্য লড়ছেন ২০২০ সালে বিশেষ নির্বাচনে নির্বাচিত বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস। তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন এলিজাবেথ ক্রাউলি।
দু’জনের মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। ব্রুকলিনে বরো প্রেসিডেন্ট ভোটারদের প্রথম পছন্দ হিসেবে অনেক বেশি ব্যাধানে এগিয়ে আছেন অ্যান্টোনিও রেসন। ব্রঙ্কসের বরো প্রেসিডেন্ট পদে ভোটারদের প্রথম পছন্দ ভ্যানেসা গিবসন এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড বরোতে প্রেসিডেন্ট পদে সাবেক কংগ্রেসম্যান ভিটো ফোসেলা এগিয়ে আছেন।
মেয়র পদে ভোটারদের দ্বিতীয় পছন্দ মায়া উইলি বলেন, “প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখনো শেষ হয়নি। ভোটাররা আজ কি করেছেন, আমি তা জানি না; আমরা কেউ জানি না। কারণ ভোট এখনো গণনা করা হচ্ছে। প্রতিটি ভোট গণনা করা হবে।”
নির্বাচনী প্রচারাভিযান চলাকালে উইলি বারবার তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী এরিক অ্যাডামসকে চ্যালেঞ্জ করেছেন বিশেষ করে সিটির পুলিশী ব্যবস্থা নিয়ে। সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে তিনি জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। সিটির সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন ও কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফ্রি তাকে সবসময় সমর্থন দিয়েছেন।
নিউইয়র্ক সিটির ভোটাররা মঙ্গলবার মেয়র পদে ভোট দেয়া ছাড়াও ডেমোক্রেটিক প্রাইমারীতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে ভোট দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সিটি কম্পট্রোলার, পাবলিক এডভোকেট, বরো প্রেসিডেন্ট, ম্যানহাটান ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নি এবং সিটি কাউন্সিল মেম্বারের অনেকগুলো পদ।
কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদ। কে বর্তমান মেয়র বিল ডি ব্লাজিও’র স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন, এটিই সবার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে করোনা মহামারীর কারণে ইতিমধ্যে সিটিতে যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলা করে কিভাবে দেড় বছর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় এবং সিটিতে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে চলার যে আলামত ইতিমধ্যে প্রকট হয়ে উঠেছে কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণে এনে জনজীবনকে নিরাপদ করা সম্ভব, নির্বাচনে এই ইস্যুগুলোই ভোটার ও নগরবাসীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সকলের কামনা সিটির দায়িত্ব গ্রহণ করুক একজন যোগ্য ব্যক্তি।
মেয়র প্রার্থীরা গত কয়েক মাস যাবত নিউইয়র্ক সিটির উন্নয়নে কি করতে চান সেসব কথা বলেছেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল নিরাপত্তা, অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন, পাবলিক স্কুলের মানোন্নয়ন ও কারিকুলাম সংস্কার, অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ।
ডেমোক্রেটিক প্রাইমারী যিনি মেয়র পদে বিজয়ী ঘোষিত হবেন, আগামী নভেম্বর মাসে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে রিপাবলিকান পার্টির মেয়র পদপ্রার্থী গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস এর প্রতিষ্ঠাতা কার্টিস সিলওয়া’র সঙ্গে, যিনি রিপাবলিকান প্রাইমারীতে ফার্নান্দো ম্যাটেও’কে পরাজিত করেছেন।
নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অফ ইলেকশনের মতে সিটির ১ লাখ ৯১ হাজারের বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছে এবং বোর্ড অ্যাবসেন্টি ব্যালট পেয়েছে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার। কম্পট্রোলার পদে কাউন্সিলম্যান ব্র্যাড ল্যান্ডার এগিয়ে আছেন।
ম্যানহাটান ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নি পদে ভোটারদের প্রথম পছন্দ হিসেবে অ্যালভিন ব্র্যাগ এগিয়ে আছেন, যিনি ফেডারেল প্রসিকিউটর ও স্টেট এটর্নি জেনারেলের চিফ ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই পদে ভোটারদের দ্বিতীয় পছন্দ মেরিক বি গারল্যান্ড।