ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
জীবনের নিরাপত্তা জরুরি
Published : Monday, 28 June, 2021 at 12:00 AM
জীবনের নিরাপত্তা জরুরি আবারও ভূমধ্যসাগর থেকে যে ২৬৭ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে তিউনিসিয়ার উপকূলীয় বাহিনী, এর মধ্যে ২৬৪ জনই বাংলাদেশি। জীবন বদলানোর স্বপ্নচারী এনব মানুষ মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে ইতালির পথে যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু তিউনিসিয়ার উপকূলে লিবিয়া থেকে যাত্রা করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানটি অচল হয়ে পড়ে। পত্রিকায় প্রকাশ, সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিসহ এখন পর্যন্ত আফ্রিকার এ দেশটিতে ৭০৭ বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। বস্তুত অবৈধভাবে ইতালি পৌঁছানো বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের তালিকার শীর্ষে রয়েছি আমরা! সর্বশেষ উদ্ধার হওয়া কয়েকজনের যে প্রতিক্রিয়া সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে, তা আমাদের যুগপৎ বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন না করে পারে না।
তাদের অনেকেই ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টায় কয়েক বছর আগে দেশ ছাড়েন। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে অনেক দিন কাটানোর পর শেষ পর্যন্ত অনিশ্চিত জীবনের ফাঁদে আটকা পড়েন তারা তিউনিসিয়ায়। জীবনের চরম ঝুঁকি সত্ত্বেও অনেকে ফিরতে চান না দেশে! দেশি-বিদেশি মানব পাচারকারী চক্রের হাতে সর্বস্ব সঁপে দিয়ে যারা অন্ধকার পথে জীবনের আলোর সন্ধান করতে চেয়েছেন, তারা এখন বহুমুখী নির্মমতার শিকার। আমরা জানি, এমন সম্ভাবনাময় অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে বিভিন্ন দেশের সাগরবক্ষ, মরুপথ কিংবা গহিন জঙ্গলে। জীবনের এমন নির্মম পরিণতি সংবেদনশীল যে কোনো মানুষকে ভারাক্রান্ত না করে পারে না। আমাদের স্মরণে আছে, গত বছর লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি নৃশংসতার শিকার হওয়ার পর মানব পাচারের বিষয়টি দেশে-বিদেশে জোরালোভাবে সামনে এলেও পাচারকারীদের ভয়াবহ খেলার পথ রুদ্ধ করা যায়নি। সরকার নানা সময়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও সুফল মেলেনি। দেশি-বিদেশি চক্র অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন নিয়ে জুয়া চালিয়েই যাচ্ছে। আমরা দেখেছি, তাদের শিকড় একেবারে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এই চক্র ইউরোপের সুন্দর জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করে। তাদের প্রলোভনে বিশ্বাস করে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় অনেকেই পড়েন চরম বিপদে। আমরা এ-ও দেখেছি, যারা পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পা দেন, তাদের অনেকের পরিবারের অবস্থাই সচ্ছল নয়। সচ্ছলতার আশায় তারা আরও বেশি অসচ্ছল হয়ে পড়ছেন। জীবন বিপন্ন হচ্ছে।
একেকটি পরিবারে নেমে আসছে গাঢ় অন্ধকার। পাচারকারীরা অর্থের লোভে জীবন বিক্রি করে দিচ্ছে, অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে- অতীতে মানব পাচার মামলায় আটক কয়েকজনের জবানবন্দিতে এমন নির্দয় ও চাঞ্চল্যকর ঘটনাও জানা গেছে। আমরা জানি, আমাদের জাতীয় সংসদের একজন সদস্য মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে মানব পাচার মামলায় আটক হওয়ার পর তার সদস্যপদ খারিজ করা হয়। ভূমধ্যসাগরে অবৈধ পথে ইতালিগামীদের উদ্ধারের পর ফের আমরা মানব পাচারকারী দালালদের ব্যাপকতা নতুন করে উপলব্ধি করছি। কয়েক বছর আগে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রণীত মানব পাচারে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের তালিকায় প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের নামও উঠে এসেছিল। এমতাবস্থায় প্রশ্ন দাঁড়ায়- মানব পাচার রোধে অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি কি 'বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো'? আমরা দেখছি, পাচারকারী চক্রের সদস্যরা মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও দুর্বল মামলার কারণে ছাড়া পেয়ে যায়। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে মানব পাচার রোধে যে সদিচ্ছা রয়েছে, তা মাঠ পর্যায়ে প্রতিফলিত হলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না।
বেশিরভাগ পাচারই হয়ে থাকে স্থল ও নৌ সীমান্তপথে। আমরা মনে করি, সীমান্ত অঞ্চলের কড়া নজরদারির পাশাপাশি মানব পাচারকারীর মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনতে চালাতে হবে সাঁড়াশি অভিযান। ভেঙে দিতে হবে তাদের নেটওয়ার্ক। বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বলতা দূর করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। যারা দেশে কাক্সিক্ষত কর্ম করতে পারছেন না কিংবা কর্মহীন, তারাই পড়ছেন পাচারকারীদের খপ্পরে। এই অন্ধকার দূর করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাড়াতে হবে কর্মসংস্থান। কর্মহীনদের দিতে হবে নানা রকম সহযোগিতা-প্রেরণা। একই সঙ্গে মনোযোগ বাড়াতে হবে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও। সচেতন নাগরিকরাই হতে পারেন মানব পাচার রোধে বড় সহায়ক শক্তি। যারা ভাগ্যান্বেষণে বিপজ্জনক পথে পা দিচ্ছেন, তাদের মনে রাখতে হবে- জীবিকার আগে জীবনের নিরাপত্তা জরুরি।