করোনা মহামারির ১৬ মাসের ইতিহাসে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত সোমবার সকাল ৮টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে আট হাজার ৩৬৪ জন। এর আগে সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল গত ৭ এপ্রিল সাত হাজার ৬২৬ জন। এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে গত রবিবার, ১১৯ জন। এ অবস্থায় গত সোমবার থেকে সারা দেশে সীমিত পরিসরে লকডাউন আরোপ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিন চলবে কঠোর লকডাউন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, লাশ দাফন, হাসপাতালে রোগী আনা-নেওয়ার মতো কিছু জরুরি সেবা বা কাজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ব্যাটালিয়ন পুলিশ ও বিজিবি। তারা টহলে থাকবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় মতা দেওয়া হয়েছে। এবার কোনো ধরনের মুভমেন্ট পাস দেওয়া হবে না। প্রাইভেট কারও চলবে না। দেশে করোনা সংক্রমণের যে বিপজ্জনক ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তাতে এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্পও নেই। তা সত্ত্বেও লকডাউনের সময় নি¤œ আয়ের মানুষ যাতে খাবারের কষ্টে না থাকে, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সোমবার ত্রাণমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহামারি কতটা ভয়ানক রূপ নিতে পারে, তা আমরা দেখেছি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। সেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ভারতে এমন ভয়াবহ সংক্রমণের জন্য দায়ী যে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট, তা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে এটি ছিল প্রধানত সীমান্ত এলাকায়। এখন রাজধানীসহ সারা দেশেই এর উপস্থিতি রয়েছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভারতের মতো ভয়াবহ হতে পারে, যদি না কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ল্েযই কঠোর লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। মানুষের উচিত লকডাউনকে সফল করা। একই সঙ্গে টিকা প্রদানের হার বাড়ানোও জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানিয়েছেন, টিকা পাওয়ার সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী মাসেই পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা আসবে এবং গণটিকাদান কর্মসূচি আবার ব্যাপক আকারে শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, টিকাও শতভাগ সুরা দিতে পারছে না। টিকা দেওয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
মানুষের মধ্যে অসচেতনতা এখনো অনেক বেশি। লকডাউনের খবর শুনেই মানুষ দলে দলে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে। সামাজিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা, অনেকে মুখে মাস্কও পরে না। এর মধ্যে কাছে চলে এসেছে কোরবানির ঈদ। আবারও দলে দলে মানুষ ঢাকা ছাড়বে। কয়েক দিনের মধ্যেই স্থানে স্থানে গরুর হাট বসতে শুরু করবে। তাই সেসব পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেওয়া হবে তার পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে। যেকোনোভাবেই হোক, মহামারির ভয়াবহ বিস্তার রোধ করতেই হবে।