Published : Saturday, 3 July, 2021 at 12:00 AM, Update: 03.07.2021 12:18:05 AM
কবির হোসেন,তিতাস ।।
কুমিল্লার
তিতাস উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব কোনো ভবন নেই। ফলে এসব ইউপির
দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে চেয়ারম্যানের সুবিধা মতো স্থানে। আর এসকল
স্থানগুলো হলো স্কুল ঘর, দোকান কিংবা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ঘর।
সরেজমিনে
গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ১নং সাতানী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান কৃন্সপুর
গ্রামে অবস্থিত পুরাতন ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়ে জড়াজীর্ণ অবস্থায় পড়ে
আছে। এ বিষয়ে কথা হয় কৃষ্ণপুর গ্রামের আক্তার হোসেনের সাথে। তিনি বলেন- আজ
প্রায় ২০ ধরে ইউপি পরিষদের ভবন নাই। যখন যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন-
তাঁর সুবিধা মতো স্থানে অফিস করেন । এতে করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেবা আনতে
গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় জনসাধারণকে। অনেক সময় ও অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়।
বর্তমানে বাতাকান্দি বাজারে একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে চেয়ারম্যান কার্যক্রম
চালাচ্ছপ।ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক বলেন পূর্বের ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার
পর থেকে প্রায় ২০ বছর ধরে সাতানী ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নাই। ইউনিয়নের
কৃস্নপুর, সাতানী ও চরকুমারিয়া গ্রামে ৫০শতক করে যায়গা দিয়েছে স্থানীয়রা,
কিন্ত স্থান নির্ধারণে এই তিন গ্রামবাসীর মধ্যে মতবিরোধ থাকায় বর্তমানে
হাইকোর্টে বিষয়টি বিচারাধীন আছে। বর্তমানে আমি বাতাকান্দি বাজারে দুই কক্ষ
বিশিষ্ট একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাচ্ছি। কতো
টাকা ভাড়া দেন এবং কোথায় থেকে দেন, যানতে চাইলে চেয়ারম্যান সামছুল হক বলেন
বছরে ৩৬ হাজার টাকা ভাড়া,টেক্সের টাকা থেকে এই ভাড়া পরিশোধ করেন। উপজেলার
৫নং কলাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের নেই কোনো নিজস্ব ভবন, কার্যক্রম চলছে বর্তমান
চেয়ারম্যানে সুবিধামতো স্থান কলান্দি বাজারে ভাড়ায় চালিত দোকান ঘরে। কি
কারনে ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম দোকান ঘরে চলছে জানতে চাইলে
ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল বলেন ১৯৯২ সালে বৃহত্তর
ভিটিকান্দি ইউনিয়ন থেকে ভাগ হয়ে কলাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়,তখন
থেকেই পরিষদ ভবন নেই।যে যখন চেয়ারম্যান হয় তাদের সুবিধা মতো স্থানে অফিস
করে,বর্তমানে কলাকান্দি বাজারে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে পরিষদের দাপ্তরিক
কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন পরিষদের ভবন
না থাকায় কলাকান্দি বাজারে দুইটি রুম মাসে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে
ইউনিয়ন বাসীকে সেবা দিচ্ছি এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাচ্ছি। কোন খাদ থেকে
ভাড়ার টাকা দেন জানতে চাইলে, চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন টেক্সের
টাকা থেকে প্রতি মাসের ভাড়া পরিশোধ করেন। জায়গার ব্যবস্থা না হওয়ায় পরিষদের
নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিতে পারছিনা।
৬নং ভিটিকান্দি
ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে মানিককান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
কক্ষে। ওই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি এইচ এম এখলাছ বলেন দাসকান্দিতে
ইউনিয়ন পরিষদ ছিল, ১৯৮৮ সালে গোমতী নদীতে ভবনটি বিলিন হয়ে যায়,তখন থেকেই
আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নেই, যে যখন চেয়ারম্যান হয়, তাদের সুবিধা মতো
স্থানে অফিস কার্যক্রম চালায়। বর্তমান চেয়ারম্যান চায় গোমতী নদীর দক্ষিণ
পাড় ওনার সুবিধা মতো স্থানে, আর উত্তর পাড়ের কয়েক গ্রামের লোকজন চায় উত্তর
পাড়ে,এমন মতবিরোধের কারনে ভবন হচ্ছে না। বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হোসেন
মোল্লার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন স্থান নির্ধারণে ইউনিয়নের গোমতী নদীর
দক্ষিণ ও উত্তর পাড়ের জনগণের মতবিরোধ থাকায় ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব
পাঠানো যাচ্ছে না । ও ৭ নং নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে পানি
উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচয়ে এখানই
চলছে পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম, কথা হয় ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার
জুলফিকার আলীর সাথে,তিনি বলেন বৃহত্তর নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব
ভবন ছিল জিয়ারকান্দিতে, ১৯৯২ সালে ভাগ হয়ে জিয়ারকান্দি নামে নাম করন করে
৮নং জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হলে ভবনটি ওই পরিষদের আওতায় চলে যায়।
ফলে আমাদের নারান্দিয়া ইউনিয়নে কোনো ভবন না থাকায় যে যখন চেয়ারম্যান হয়,সে
তার পছন্দ মতো স্থানে পরিষদের কার্যক্রম চালায়,পূর্বের চেয়ারম্যান
আক্তারুজ্জামান উত্তর নারান্দিয়া কাচারী বাজার তার সুবিধা মতো ইউনিয়ন ভূমি
অফিসে করতেন পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম। বর্তমান চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার
সালাহ উদ্দিন বলেন আসমানিয়া বাজারে নিসকন্ঠ ২৫ শতক ভূমির উপর নারান্দিয়া
ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসক(ডিসি) ও নির্বাহী কর্মকর্তা (
ইউএনও)প্রতিবেদনসহ সকল প্রকার প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র স্থানীয় সরকার
মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে,এখন পক্রিয়াধীন আছে। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের
সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি চার
ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের দাবি ভূমির জটিলতা নিরসন করে ইউনিয়ন গুলোর
মধ্যবর্তি স্থানে ইউনিয়ন বাসীর সুবিধার্তে ভবন নির্মাণ করা হলে, খুব সহজেই
তারা সেবা নিতে পারবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) মোছাম্মৎ রাশেদা
আক্তার বলেন জমি অধিগ্রহণ কারার কোনো সুযোগ নাই, কিন্তু ইউনিয়ন স্ব-স্ব
ইউনিয়নের কেউ যদি জমি দান করেন তাহলে আমরা (প্রশাসন) ইউনিয়ন পরিষদের জন্য
ভবন নির্মাণের প্রস্তাব পাঠাতে পারবো, তবে সেই জমিটি হবে ইউনিয়নের
মধ্যবর্তি স্থানে অথবা ইউনিয়নবাসীর সুবিধা মতো স্থানে। আমি ইতি মধ্যে
ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের বলে দিয়েছি ইউপি ভবনের জন্য জমি দিতে আগ্রহীদের সাথে
কথা বলার জন্য।