৭৯ দিনে ৫ হাজার মৃত্যু, গড়ে ৬৩ জন
Published : Tuesday, 6 July, 2021 at 12:00 AM
'সংক্রমণ বেশি হলে সঙ্গত কারণে মৃত্যুও বেশি হবে। এটাই এই রোগের নিয়ম। এর প্রতিকার, সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ভ্যাকসিন নেওয়া। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও সবসময় মাস্ক পরতে হবে। নইলে করোনা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।'
দ্রুততম সময়ের মধ্যে করোনা সংক্রমণে ৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে, এম আর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর একথা বলেন।
তিনি বলেন, 'করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে সময় লেগেছে ৬ মাসেরও বেশি সময়। এরপর ৫ থেকে ১০ হাজার মৃত্যুতে পৌঁছতেও সময় লেগেছে প্রায় ৭ মাস। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২ মাস ১৯ দিনে। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক আক্রান্তদের প্রায় ৭৮ শতাংশের নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে। আগের সংক্রমণের সঙ্গে এর অনেক পার্থক্য আছে।'
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগী মারা যান ১৮ মার্চ ২০২০ সালে। তিনি ছিলেন ৭০ বছর বয়সি একজন পুরুষ। প্রথম রোগী মারা যাওয়ার ২ মাস ২২ দিন পরে, ১০ জুন ২০২০ সালে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা পৌছায় এক হাজারে। এই সময়ে গড় মৃত্যু ছিল দিনে ১২ জন।
এরপর ১ হাজার থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ মাস ১২ দিন। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭ জনে। এই সময়ে গড় মৃত্যু ৩৯ জন।
৫ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পর সেই সংখ্যা ১০ হাজারে যেতে সময় লাগে ৬ মাস ২২ দিন। এ সময় করোনায় শনাক্ত এবং মৃতের হার ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এ বছরের ১৫ এপ্রিল করোনায় অক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮১ জনে। এই সময়ে দিনে গড় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৫ জন।
এরপর রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাওয়ার আন্তঃজেলা গণপরিবহন। পাশাপাশি সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বন্ধ করার জন্য আন্তঃজেলা বাসের পাশাপাশি ট্রেন এবং সব ধরণের যাত্রীবাহী নৌযানও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও মানুষজনের রাজধানী ছেড়ে যাওয়া, এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াত বন্ধ করা যায়নি। বিকল্প উপায়ে, নানান বাহানায় লোকজন রাজধানী ছেড়েছে আবার রাজধানীতে ফিরে এসেছে।
অপরদিকে সীমান্ত খোলা থাকার কারণে বৈধ-অবৈধ উপায়ে মানুষজন ভারতে যাওয়া-আসার মাধ্যমে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে সারা দেশে। ঢাকায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা কমে গিয়ে সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে তা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এক পর্যায়ে রাজধানীর বাইরে ক্রমে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে। সে ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ঢাকার তুলনায় এখন করেনার নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে খুলনা বিভাগে।
চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল যেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৮১ জন, সেখানে মাত্র ২ মাস ১৯ দিনে (৭৯ দিন) ১০ হাজার থেকে বেড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৫ জন। এই সময়ের মধ্যে গড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ জন।
একদিনে করোনায় মৃতের রেকর্ড হয়েছে রোববার (৪ জুলাই), এদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৫৩ জন মারা গেছেন। এনিয়ে মোট ১৫ হাজার ৬৫ জন মারা গেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৬৬১ জন। ৪ জুলাই পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭ জন।