জামিনের অপেক্ষায় থাকা ভারতের অশীতিপর অধিকারকর্মী ফাদার স্ট্যান স্বামী কারা হেফাজতে হাসপাতালেই মারা গেলেন। এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, সোমবার মুম্বাইয়ের ‘হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে’ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আদালতের নির্দেশে গত মে মাস থেকে তাকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ৮৪ বছর বয়সী স্ট্যান স্বামীকে রোববার থেকে ‘ভেন্টিলেটর’ কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিতে হচ্ছিল।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার সকালে তার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়; তারপর আর সংজ্ঞা ফেরেনি বলে আদালতে জামিন শুনানিতে জানিয়েছিলেন তার চিকিৎসক।
পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত জেসুইট যাজক স্ট্যান স্বামীর শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত মে মাসে। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তিনি কয়েকবার জামিন আবেদন করলেও সাড়া মেলেনি।
গত বছর ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে’ ফাদার স্ট্যান স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভীমা কোড়েগাওঁয়ে জাতপাতের ভিত্তিতে অশান্তি ছড়ানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা-এনআইএ।
তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে পেশোয়াদের চূড়ান্ত পরাজয়ের স্মরণে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি পুনের কাছে ভীমা-কোড়েগাঁওয়ের বিজয় স্তম্ভে দলিতরা জড়ো হয়। ১৮১৮ সালে এই দিনেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পেশোয়া শক্তিকে পরাজিত করেছিল।
সেসময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সাহায্য করেছিল দলিত ‘মাহার’ জনগোষ্ঠী। এরপর থেকে ওই দিনটিকে তারা ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভীমা কোড়েগাঁওয়ে দলিতদের ‘এলগার পরিষদ’ এর ওই বিজয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন স্ট্যান স্বামী। পরদিন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় দলিত-মারাঠা সংঘর্ষ দেখা যায়।
তদন্তে নেমে সমাজকর্মী গৌতম নওলখা, কমি ভারাভারা রাও, অরুণ ফেরেরা, রোনা উইলসন, ভারনন গঞ্জালভেস ও সুধা ভরদ্বাজসহ ১৫ জন অধিকারকর্মী, লেখক, অধ্যাপক, আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাদেরকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
ওই মামলায় ২০২০ সালের অক্টোবরে রাঁচির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্ট্যান স্বামীকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এলগার পরিষদের সমাবেশে তার ‘উসকানিমূলক বক্তব্যের জেরেই’ সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়।
ভারতে এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, স্ট্যান স্বামী ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।
ফাদার স্ট্যান স্বামীর বিরুদ্ধে ‘নকশাল’ আন্দোলনে জড়িতি নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআইয়ের (মাওবাদী) শাখা সংগঠনের সদস্য হওয়ারও অভিযোগ আনে এনআইএ। আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ড রাজ্যে মাওবাদীরা বেশ সক্রিয়।
এসব অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছেন ফাদার স্ট্যান স্বামী। ‘জাত বৈষম্য’ এবং ঝাড়খাণ্ডের আদিবাসীদের ‘ভূমির অধিকার’ নিয়ে পাঁচ দশক ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসার কারণেই সরকার তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছিলেন তিনি।