ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
রেকর্ড ভেঙে ২০১ প্রাণ ঝরে গেল এক দিনে
Published : Thursday, 8 July, 2021 at 12:00 AM, Update: 08.07.2021 12:13:25 AM
রেকর্ড ভেঙে ২০১ প্রাণ ঝরে গেল এক দিনেনিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে এক দিনেই যুক্ত হল ২০১ নাম, মহামারীর ১৬ মাসে এক দিনে এত মৃত্যু আর কখনও দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে। দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর উপরে থাকছিল প্রতিদিন। এর মধ্যে ৪ জুলাই প্রথমবারের মত মৃত্যুর সংখ্যা দেড়শ ছাড়ানোর খবর আসে। তিন দিনের মাথায় তা এক লাফে দুশ ছাড়িয়ে গেল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৭ হাজার নমুন পরীক্ষা করে আরও ১১ হাজার ১৬২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে এপ্রিলের রেকর্ড ভেঙে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আট হাজার ছাড়ায় গত ২৮ জুন। এরপর ১ জুলাই থেকে সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি হয়।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার রেকর্ড ১১ হাজার ৫২৫ জন রোগী শাক্তের খবর আসে। তার পরদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও এখনও তা ১১ হাজারের উপরে রয়েছে।
আগের দিনের মতই পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত রোগীর হার রয়েছে ৩১ শতাংশের উপরে, যেমনটা গতবছরের অগাস্টে ছিল।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৮ জনে। তাদের মধ্যে মোট ১৫ হাজার ৫৯৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ ভাইরাস।
যে ২০১ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৬ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের।
কেবল ঢাকা বিভাগেই গত এক দিনে ৪৭৩২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৪২ শতাংশের বেশি। খুলনা বিভাগে এক দিনে শনাক্ত রোগী বেড়ে হয়েছে ১৯০০, চট্টগ্রামেও দেড় হাজারের উপরে।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৫ হাজার ৯৮৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৫০ হাজার ৫০২ জন।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের সামাজিক বিস্তার ঘটায় কোভিড এখন ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম পর্যায়ে; হাসপাতালে এখন যে রোগীরা আসছেন, তাদের অর্ধেকই গ্রামের।
এ অবস্থায় বেশি সংক্রমণের জেলা ও উপজেলাগুলোতে হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। শয্যা খালি না থাকায় যশোর সদর হাসপাতালে বারান্দায় ভ্যানের ওপর কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে বুধবার।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বিভিন্ন ইউনিয়নের ঘরে ঘরে জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ দেখা দিয়েছে, যেগুলো কোভিডেরও লক্ষণ। আর চিকিৎসকরা বলেছেন, রোগীরা এমন অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন যে সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
গত এক দিনে খুলনা বিভাগে যে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১২ জন যশোর এবং ১২ জন খুলনা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। আর ঢাকা বিভাগে মারা যাওয়া ৫৮ জনের মধ্যে ২৯ জনই ঢাকা জেলার।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ২১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৪ জন, সিলেট বিভাগে ৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
মৃত ২০১ জনের মধ্যে ১১৫ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৭ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২১ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের ১১৯ জন ছিলেন পুরুষ, ৮২ জন ছিলেন নারী। ১৬৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১২ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১ জনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬০৫টি ল্যাবে ৩৫ হাজার ৬৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ ২৯ হাজার ৮৩২টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ, আগেরদিন ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তার শুরুর পর নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাড়ছিল। মঙ্গলবার তা ৩১ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
এর আগে গতবছর ৩ অগাস্ট শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর গত বছরের ১২ জুলাই উঠেছিল ৩৩ দশমিক শতাংশে, যা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ২৮৫ জন, টাঙ্গাইলে ২৭৭ জন, গাজীপুরে ২২০ জন, ফরিদপুরে ১৬৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৫৬ জন, গোপালগঞ্জে ১৫৩ জন এবং কিশোরগঞ্জে ১১৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৬১১ জন, কুমিল্লায় ৩০৩ জন, কক্সবাজারে ১৭৬ জন, নোয়াখালীতে ১৫৭ জন এবং ফেনীতে ১২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে পাবনায় ২৯১ জন, রাজশাহী জেলায় ২৩৪ জন, বগুড়ায় ১৫৪ জন এবং নাটোরে ১২৯ জন নতুন রোগী মিলেছে।
খুলনা বিভাগের খুলনা জেলায় ৫৮৫ জন, যশোরে ৩৭৩ জন, কুষ্টিয়ায় ২৩৪ জন, ঝিনাইদহে ১৫৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৩০ জন, বাগেরহাটে ১১৮ জন এবং সাতক্ষীরায় ১১১ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ।
রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে আরও ১১১ জন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১০৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় ২১৩ জন, বরিশাল জেলায় ১৭৩ জন, ঝালকাঠিতে ১৬৩ জন, পিরোজপুরে ১২১ জন এবং ময়মনসিংহ জেলায় ১৯৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৪ জুলাই তা ১৫ হাজার ছাড়ায়।
বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ৪৬ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৩৯ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।