অগ্নিকাণ্ড প্রকাশ্যে আনল শিশুশ্রম
Published : Saturday, 10 July, 2021 at 12:00 AM
দুই
তরুণীকে কাঁদতে কাঁদতে আগুনে পোড়া হাসেম ফুডস কারখানার দিকে এগোতে দেখে
তাদের পথ আটকায় পুলিশ। জানা যায়, তাদের কিশোরী বোন ওই কারখানায় কাজ করত,
আগুন লাগার পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। তিন বোনের মেজ ঝুমা জানালেন, তার
নিখোঁজ বোনের নাম ইসরাত জাহান ফুলি, বয়স ১৬ বছর। বড় বোন লিমাকে নিয়ে তিনি
কারখানায় এসেছেন ফুলিকে খুঁজতে।
তাদের মত অনেকেই শুক্রবার সকাল থেকে
সজীব গ্রুপের এই কারখানার ফটকে ভিড় করছিলেন ভেতরে আটকা পড়া প্রিয়জনের
খোঁজে। রূপগঞ্জ থানার এসআই মিন্টু ফটকে বসে নিখোঁজদের তালিকা করছিলেন।
ঝুমা
ও লিমার কথায় তাদের বোন ফুলির নাম যুক্ত তিনি লিখে নিলেন সেই তালিকার ৪৮
নম্বরে। স্বজনদের কথায় জানা গেল, সেই তালিকার অনেকেরই বয়স ১৮ পার হয়নি।
নারায়ণগঞ্জের
রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস, কোমল পানীয় ও বিভিন্ন খাদ্য
সামগ্রী তৈরির ওই কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগে।
শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ভবনের উপরের দুটি ফ্লোরের আগুন নেভাতে পারেননি
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
ততক্ষণে তারা নিচের ফ্লোগুলো থেকে ৪৯ জনের পোড়া
দেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। আগের রাতেই
আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন।
শুক্রবার ভোরের
দিকে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসে গেলেও সকালে পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় নতুন করে
আগুন বেড়ে যায়। কারখানায় আটকা পড়া কর্মীদের সন্ধান না পেয়ে ততক্ষণে বাইরে
জড়ো হওয়া স্বজনরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
১৪ বছর বয়সী ফারজানা গত তিন বছর
ধরে পাঁচ হাজার টাকায় এ কারখানায় কাজ করছিল বলে জানালেন তার মা ঝরনা বেগম।
মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে তিনি কারখানা এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন।
তার সঙ্গে
থাকা ফারজানার সহকর্মী ১৬ বছর বয়সী মৌমিতা জানালেন, হাসেম ফুডস কারখানায়
সেজান জুস, চানাচুর, সেমাই, চকলেটসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি হত। তবে
বৃহস্পতিবার বিকালে যখন আগুন লাগে তিনি তখন কাজে ছিলেন না।
মৌমিতা জানালেন, তার বয়সী অনেক কিশোর-কিশোরী ছিল কারখানার কর্মীদের মধ্যে। তবে কম বয়সীদের সাধারণত রাতের পালায় রাখা হত না।
কম বয়সীদের এভাবে কারখানায় কাজ করানোর বিষয়ে হাসেম ফুডসের কর্মকর্তাদের কারও বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
নিখোঁজের
তালিকায় ফুলির নাম ওঠার পর তার বোন লিমা জানালেন, তাদের গ্রামের বাড়ি
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায়। মহামারীর মধ্যে পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে
যাওয়ায় ছোট বোনটিকেও তারা কারখানার কাজে পাঠাতে বাধ্য হন।
কিশোরী বোনকে এভাবে কারখানায় পাঠাতে হয়েছিল বলে এখন অপরাধবোধে ভুগছেন বড় দুই বোন। তাদের একজন কাজ করেন পোশাক কারখানায়।
লিমা বললেন, পোশাক কারখানাগুলোতে কম বয়সীদের নেয় না। তবে হাসেম ফুডসে সেই সুযোগ ছিল বলে স্থানীয় অনেক কিশোর-কিশোরীই সেখানে কাজ করত।
নিখোঁজদের
নাম টুকতে টুকতে রূপগঞ্জ থানার এসআই মিন্টু প্রবোধ দিয়ে বলছিলেন, “এদের
মধ্যে অনেকে হয়ত ভিড়ের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। হয়ত পাওয়া যাবে।
মিন্টুর এই কথা শুনে লিমা বললেন, “দোয়া করবেন ভাই, আমাদের বোনটার যেন তাই হয়।”