আবারও বন্ধ হয়ে গেলো বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কার্যক্রম। শনিবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রাক শ্রমিক ও ট্রাক মালিক সমিতি। করোনা সংক্রমণরোধে ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথরের ট্রাক সংখ্যা সীমিত (৩০ ট্রাক) করায় আমদানি-রফতানি বন্ধ করে তারা। তবে চেকপোস্ট কার্গো শাখায় অন্যান্য আমদানি-রফতানি পণ্যের গেট পাসের (আইজিএম) কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, বেনাপোলে পাথর আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রায় ৮০০ পাথরবাহী ট্রাক আটকেপড়ে পণ্য জটের সৃষ্টি হয়েছে। তাই সব ট্রাকের গেট পাস একসঙ্গে করতে হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ভারত থেকে যেসব পাথরের ট্রাক আমদানি হয় সেগুলো বন্দরের বাইরে আনলোড হয়। পাথর আনলোড করার সময় ভারতীয় ট্রাকচালক ও হেলপাররা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চারদিকে ঘুরে বেড়ায়। ভারতে করোনার প্রভাব বেশি হওয়ায় সেদেশের চালক ও হেলপারদের মাধ্যমে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এসব এলাকায় ছড়াতে পারে। এজন্য আমদানিকৃত ট্রাক সংখ্যা সীমিত করা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত সংখ্যক ট্রাকে পণ্য গ্রহণ করা হবে।
পাথর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রূপালী এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি রাজিব হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর কাজে এসব পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে পাথর খালাস করতে দিচ্ছে না, আবার কাস্টম কর্তৃপক্ষ পাথর আমদানি সীমিত করার কথা বলেছে। প্রতিবাদে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবি ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে প্রায় ৮০০ পাথরবোঝাই ট্রাক আটকাপড়ে রয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, প্রতিদিন বন্দরে ১৫০-২০০ ট্রাক পাথর রাখার জায়গা নেই। এসব পাথর বন্দরে নামালে অন্য মালামাল ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটবে। জায়গা সংকটের কারণে ভারত থেকে আমদানি করা পাথর বন্দর এলাকার পাশে আমদানিকারকের নিজস্ব জায়গায় আনলোড করা হচ্ছিল। ভারতীয় চালক ও হেলপারদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে- এজন্য পাথরবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশি চালকরা আমদানিকারকের জায়গায় আনলোড করবে। এই শর্তে পাথর আমদানি শুরু হয়েছিল। আবারও ভারতীয় ব্যসায়ীরা একই দাবিতে আমদানি-রফতানি বন্ধ রেখেছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বন্দরে জায়গা সংটের কারণে প্রতিনিয়ত আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। প্রতি বছর বন্দর থেকে সরকারকে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় মারাত্মকভাবে বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। জায়গার অভাবে বাণিজ্য বন্ধ থাকছে, আবার খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখায় রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী সুবিধা বঞ্চিত হয়ে এই বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। এজন্যই গত চার বছর ধরে এ বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হারে রাজস্ব আসছে না।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের হার বাড়ছে। এ অবস্থায় বন্দরের বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ভারতীয় ট্রাকচালকরা পাথর খালি করায় এই ঝুঁকি আরও বাড়ছিল। ফলে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বন্দর দিয়ে আপাতত পাথরবাহী ট্রাক সীমিত আকারে অর্থাৎ ৩০ ট্রাক করে আমদানির কথা বলেছি। কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সচলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
এর আগে একই দাবিতে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা ২২ জুন আমদানি-রফতানি বন্ধ রাখে। পরে উভয় পক্ষের আলোচনা শেষে প্রতিদিন ৩০টি করে পাথরের ট্রাক গ্রহণ করা হবে সিদ্ধান্ত হলে আমদানি-রফতানি চালু হয়। তারপরও ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীদের নতুন করে কথায় কথায় আমদানি-রফতানি বন্ধের ঘোষণায় বেনাপোলের বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।