মাসুদ আলম,কুমিল্লা।।
কুমিল্লায়
কোরবানির পশুর অভাব নেই। চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে। মজুদ প্রায় দুই লাখ
৩৯ হাজার কোরবানির পশু। এসব কেনা-বেচায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ
জেলায় ৩৬৩টি স্থানে হাট বসবে। এসব হাটে জেলার খামারিরা তাদের পশু বিক্রি
করবেন। তবে ঈদুল আজহা যত ঘনিয়ে আসছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি
পাওয়ায় খারামিরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এদিকে কুমিল্লা মহানগরসহ ১৭টি উপজেলায়
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় জেলা প্রশাসন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে
হাটবাজারে গিয়ে পশু কেনাবেচায় নিরুৎসাহিত করে আসছে। এ জন্য মুঠোফোন
অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঘরে বসে কোরবানির পশু কেনার ওপর গুরুত্ব
দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়,
কুমিল্লায় জেলায় ৩০ হাজার ১৮৮ জন খামারি রয়েছেন। জেলায় এই বছর ২লাখ ৩৭
হাজার গবাদিপশুর বিপরীতে ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩৪৫ গবাদি পশু মজুদ রয়েছে।
উদ্বৃত্ত আছে ১ হাজার ৩৪৫ টি পশু। গবাদিপশুর মধ্যে এক লাখ ৮১ হআজার ১৬৮ টি
ষাঁড়, ৪০ হাজার ৭৪১টি ছাগল ও ৩৪৪৯টি ভেড়া রয়েছে। এছাড়া দেশি কৃষকদের রয়েছে
১৫ হাজার ৯৪টি গবাদিপশু।
আরও জানা যায়, এসব কোরবানির পশু কেনাবেচায় হাট
বসবে ৩৬৩টি স্থানে। হাটে অসুস্থ ও রোগা পশু শনাক্তে থাকে প্রাণিসম্পদের ৬৩
টি মেডিকেল টিম এবং জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা টিম।
এদিকে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং কঠোর লকডাউনে পশু কেনাবেচায়
দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। লকডাউনে খামারিরা পশু বাজারে নিতে পারবেন
কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা, ক্রেতা মিললেও দাম সঠিক পাবেন কিনা
এসব বিষয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আতঙ্কে রয়েছেন কুমিল্লায় পশু খামারিরা।
কুমিল্লায় বছর দশেক আগে থেকে দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদিপশু মোটাতাজা করেন
খামারিরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের এসব গরু বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন
তারা। গত বছর কোরবানির ঈদে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১১হাজার গরু ও
ছাগল বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেছেন কুমিল্লার খামারিরা।
এদিকে কেউ কেউ
আবার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গবাদিপশুর তথ্য আপলোড দিয়ে
বেচাকেনা শুরু করছেন।এতে পিছিয়ে নেই জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও কুমিল্লা জেলা
প্রশাসন। বিগত বছরে মতো “ঙহষরহব চধংঁৎ ঐধধঃ ঈঁসরষষধ” নামে দাপ্তরিক ফেসবুক
পেজ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খামারিদের গবাদিপুশর তথ্য আপলোড করেছেন।
জেলা
প্রাণিসম্পদ তথ্যমতে, প্রথম ঢেউয়ের পর করোনার প্রকোপ অনেকটা কমে যাওয়ায়
চলতি বছর জেলার অনেক খামারি গতবারের তুলনায় আরো বেশি গরু মোটাতাজা করেছেন।
অনেক নতুন খামার গড়ে উঠেছে। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি
ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি-দুটি করে গরু মোটাতাজা করছেন। শেষ সময়ে করোনার
দ্বিতীয় ঢেউ আসায় এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার খামারি ও কৃষকরা। বর্তমানে এ
পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে জেলার প্রায় ৮০ হাজার মানুষ খামারি, কৃষক ও
ব্যাপারী।
জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালকোট গ্রামের খামারি জনি মিয়া
দাবি করে বলেন, কোরবানি পশু বহনকারী যানবাহন যেন এর আওতায় না থাকে। না হলে
আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
একই উপজেলা সামীন্তবর্তী এলাকার খামারি নয়ন
সূত্র দত্ত বলেন, গেল বছর বর্ডার থেকে গরু কম আসায় কৃষক ও আমরা লাভবান
হয়েছি। সেই আশায় এবারও কৃষি অফিসের পরামর্শে গরু মোটাতাজা করেছি।
সদর
দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর হাটের ইজারাদার শফি আহমেন জানান, কোরবানির ঈদে
বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে নড়াইলে আসেন ব্যবসায়ীরা। আসছে ঈদে করোনার
কারণে অন্য কোনো জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসবেন কিনা জানি না। বাইরের জেলা
থেকে বড় ব্যবসায়ীরা না এলে হাটে বেচাকেনা জমবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন
খামারি, কৃষক, ইজারাদার, ব্যবসায়ীসহ সবাই। লকডাউনের মধ্যে কোরবানির পশুবাহী
ট্রাকসহ সব যানবাহন অবাধে চলতে দেয়া হোক।
লাকসাম উপজেলার স্থানীয় মৌসুম
গরু ব্যবসায়ী মামুন সরকার জানান, করোনার কারণে যদি ঈদ মৌসুমে গরু
ব্যবসায়ীদের লকডাউন দিয়ে আটকে দেয়া হয়, তাহলে জেলার অসংখ্য খামারি, কৃষক ও
ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কুমিল্লায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.
মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছর সরকার বিদেশ থেকে ঈদের সময় গরু
আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকরা গরুর ন্যায্যমূল্য না পেয়ে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্প্রতি বছর সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায়
জেলার স্থানীয় কৃষকের গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় খামারি ও কৃষকরা
লাভবান হয়েছেন বেশ। এ বছর করোনার কারণে কোরবানির চাহিদা কিছুটা কম থাকবে।
কুমিল্লা
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, লকডাউন ও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির
কারণে কোরবানির পশু ঘরে থেকেই মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কীভাবে
সহজে বেচাকেনা করা যাবে, এ বিষয়ে দ্রুতই একটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়া
হবে। এর মাঝেও আমরা গবাদিপুশুর তথ্য জেলা প্রশাসনে ওয়েবসাটে আপলোড দিয়েছি।
হাটবাজারে পশু হাটের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলমান লকডাউনেও জেলার
৩৬৩টি স্থানে পশু কেনাবেচার হাট বসবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে
প্রশাসন কাজ করবে।