ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
‘আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের’ ৭ সদস্য গ্রেপ্তার
Published : Monday, 12 July, 2021 at 12:00 AM
মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে মানব পাচারকারী একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র?্যাব।
এরা হলেন- আশিক (২৫), আজিজুল হক (৩৫), মিজানুর রহমান মিজান (৪৩), নাজমুল হুদা (৩১), সিমা আক্তার (২৩), হেলেনা বেগম (৪২) এবং পলি আক্তার (৪৩)।
শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে ১৭টি পাসপোর্ট, ১৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, দুটি এটিএম কার্ড, ১৫টি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা প্রদানের বই, ২টি হিসাব নথি, দুটি এনআইডি, ১০টি মোবাইলফোন ও নগদ ৫৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের আশিক এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করে লিবিয়ায় দুবছর থাকার সময় মানবপাচারের সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে দুবাইয়ে থাকা মামা রুবেলের মাধ্যমে গড়ে তোলেন ‘রুবেল সিন্ডিকেট’; কেরানীগঞ্জ থেকেই মানবপাচার করতে থাকেন।
“রুবেলের মাধ্যমে অনলাইন ভিসা, বাংলাদেশি সংগ্রহ ও নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দুবাইয়ে মানবপাচার করতো আশিক। এ সিন্ডিকেটে থাকা ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য গত দুই বছরে ৮০ বাংলাদেশিকে ইউরোপে পাচার করেছেন।”
কমান্ডার মইন বলেন, গত মাসে অবৈধভাবে ইউরোপ গমণকালে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে প্রায় ৪৩ জন নিখোঁজ হয় এবং ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়।
“এদের মধ্যে বাংলাদেশ, সুদান, মিশর, ইরিত্রিয়া ও চাঁদের নাগরিক রয়েছে বলে জানা যায়। রোববারও ৪৯ জন বাংলাদেশির উদ্ধারের সংবাদ পাওয়া গেছে।”
তিনি বলেন, ‘রুবেল সিন্ডিকেটের’ প্রধান সমন্বয়ক আশিক আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে মানবপাচার করতো। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তার এজেন্ট আছে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মানবপাচারের ঘটনায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে এই সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানা যায়। এরা তিন ধাপে মানবপাচার করে।
কমান্ডার মইন বলেন, চক্রটির দেশীয় এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের অল্প খরচে উন্নত দেশে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখায়। তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিলে পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকেট ক্রয়সহ যাবতীয় কাজ নিজস্ব উদ্যোগে করত। তবে তারা পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথি পাচার চক্রের নিজেদের কাছে রেখে দেয়।
“পরবর্তীতে তাদেরকে এককালীন বা ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে ইউরোপের পথে পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ইউরোপ গমনে তারা ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার বেশি অর্থ নেয়। সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লিবিয়ায় গমণের আগে এবং বাকি টাকা লিবিয়ায় গমণের পর ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নেয়।"
তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে চক্রটি বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে লিবিয়া রুট ব্যবহার করে। পাচারের শিকারদের মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি এজেন্টদের সাহায্যে ৭/৮ দিন অবস্থান করায়। লিবিয়া বেনগাজীতে পাঠাতে এজেন্টরা কথিত ‘মারাকাপা’ নামের একটি ডকুমেন্ট দুবাইতে পাঠায়, যা লিবিয়া যাত্রার আগে দুবাইয়ে অবস্থানরত ইউরোপে মানবপাচারের শিকারদের হস্তান্তর করা হয়।
“ওই ডকুমেন্টসহ বিদেশি এজেন্টদের সহায়তায় তাদেরকে বেনগাজীতে পাঠানো হয়। লিবিয়া পর্যন্ত যারা অর্থ পরিশোধ করে থাকে তাদেরকে স্বল্প সময়ের মধ্যপ্রাচ্যে ট্রানজিট করিয়ে সরাসরি লিবিয়ায় পাঠায়।”
মূলহোতা রুবেল দুবাই বসে সিন্ডিকেটের সমস্ত কার্যক্রম মনিটরিং করেছেন বলে জানান তিনি।
কমান্ডার মঈন বলেন, “সর্বশেষ ধাপে পাচারের শিকারদের ত্রিপলীতে পৌঁছানোর পর লিবিয়ার এজেন্টদের সহায়তায় গাজী, কাজী ও বাবুল নামের তিন বাংলাদেশি তাদের গ্রহণ করে। ভিকটিমদের ত্রিপলীতে বেশ কয়েকদিন আটকে রাখে। এ সময়ে সিন্ডিকেটটি বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিনিধির মাধ্যমে ইউরোপ গমনেচ্ছুদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। এরপর ইউরোপে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদেরকে হস্তান্তর করে।
“কোনো এক ভোররাতে এক সঙ্গে কয়েকটি নৌযান লিবিয়া হয়ে তিউনিসিয়া উপকূলীয় চ্যানেল হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপের পথে পাচার করে। পথে ভূমধ্যসাগরে দূর্ঘটনার শিকার হয় এবং মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে।”
ভূমধ্যসাগরের বিগত কয়েকটি নৌকাডুবি ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিখোঁজ ও নিহত বাংলাদেশীদের এই চক্র পাচার করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা।
চক্রটির মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮০ বাংলাদেশি অবৈধপথে ইউরোপে পাচারের শিকার হয়েছেন।
তারা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, রুবেল ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত লিবিয়া অবস্থানের মাধ্যমে আন্তজার্তিক মানবপাচার চক্রের সাথে তার বিশেষ যোগাযোগ হয়। এখন লিবিয়ায় রুবেলের বিরুদ্ধে মানব পাচারসংক্রান্ত অভিযোগ থাকায় তিনি দুবাইয়ে অবস্থান করে সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করছিলেন।